ভিডিয়ো-আলোচনার মঞ্চে রাষ্ট্রপতি। ছবি: পিটিআই।
প্রধানমন্ত্রীর ‘জয় অনুসন্ধান’ মন্ত্র মাথায় রেখে যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে গবেষণা ও উদ্ভাবনে জোর দেওয়া হয়েছে, তা প্রায়ই বলেন শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক। বলেছেন সোমবারও। কিন্তু এই নীতি সম্পর্কে ভিডিয়ো-আলোচনার মঞ্চে খোদ রাষ্ট্রপতি মনে করিয়ে দিলেন যে, গবেষণায় সরকারি বরাদ্দ এ দেশে এখনও নগণ্য। একই কথা উঠে এল শিক্ষানীতির খসড়া তৈরির কমিটির চেয়ারম্যান কে কস্তুরীরঙ্গনের মুখেও।
এ দিন রাজ্যপাল, শিক্ষামন্ত্রীদের জন্য আয়োজিত শিক্ষানীতি সংক্রান্ত ভিডিয়ো-আলোচনায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, “গবেষণায় দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৮% বরাদ্দ করে আমেরিকা। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইজ়রায়েলে তা যথাক্রমে ৪.২% ও ৪.৩%। সেখানে ভারতের তা মাত্র ০.৭%।” তাঁর মতে, কেন্দ্র এবং রাজ্যের এই খাতে অবিলম্বে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।
কস্তুরীরঙ্গনও মনে করিয়েছেন, আমেরিকা, ইজ়রায়েলের মতো দেশের তুলনায় প্রতি লক্ষ জনে গবেষণায় নিযুক্তের সংখ্যা ভারতের অনেক কম। অথচ দেশের উন্নতির জন্য তাত্ত্বিক ও প্রয়োগমূলক গবেষণায় জোর দেওয়া জরুরি। এই বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ানোর কথা বলেছেন কমিটির সদস্য তথা গণিতের ‘সর্বোচ্চ সম্মান’ ফিল্ডস মেডেলে ভূষিত মঞ্জুল ভার্গবও। চেন্নাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক গত চার দশকে গবেষণায় চিনের তুলনায় পিছিয়ে পড়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরার সময়ে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েছেন শিক্ষা মন্ত্রকের কর্তা-ব্যক্তিরা।
আরও পড়ুন: পরিচয়পত্রে এ বার থাকবে মায়েরও নাম, বদল আফগান আইনে
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দেশে শিক্ষায় বাজেট-বরাদ্দই যেখানে বাড়ন্ত, সেখানে আলাদা ভাবে গবেষণা আর খাতির পাবে কী ভাবে? তা সে প্রধানমন্ত্রী যতই ভারতকে সারা পৃথিবীর উৎপাদন-কেন্দ্র করার কথা বলুন। নতুন শিক্ষানীতিতে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে ওই বাজেটকে জিডিপি-র ৬%-এ নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব হল, ওই লক্ষ্যমাত্রাটি অর্ধ শতাব্দীর পুরনো। শুধু তা-ই নয়, ২০১৪-১৫ সালে যেখানে কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির ০.৫৩% ছিল, ২০২০-২১ সালে তা নেমে এসেছে ০.৪৪ %-এ। অর্থাৎ, বৃদ্ধির বদলে মোদী জমানায় বরাদ্দ নিম্নমুখী।
আরও পড়ুন: রাশিয়া না চিন, বাজারে কার ভ্যাকসিন আগে
এ দিনও এ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠার সময়ে অবশ্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দায়ের বেশির ভাগটাই কার্যত রাজ্যের কাঁধে চাপিয়েছেন নিশঙ্ক। বলেছেন, “৬ শতাংশের লক্ষ্য ছুঁতে আমরা অবশ্যই পারব।…কোন রাজ্য চাইবে না যে, তার ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার ভাল সুযোগ পাক। যে সমস্ত রাজ্য এখন জিডিপির ২%-২.৫% ব্যয় করে, তাদের উপরে তুলে আনতে হবে।” কেন্দ্র-রাজ্য হাত মিলিয়েই এই লক্ষ্য ছোঁয়া সম্ভব হবে বলে তাঁর দাবি।