তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়ে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা করতে এ বার অধ্যাদেশ আনল সরকার। এ বিষয়ে সংসদে বিল আসার পরে অভিযোগ উঠেছিল, মোদী সরকার পরিবার ভাঙার রাস্তা তৈরি করছে। তাই একে মানবিক মুখ দিতে, তিন তালাকের অপরাধে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেও অধ্যাদেশে আদালত থেকে জামিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বামী ভুল স্বীকার করলে, স্ত্রী রফার জন্য আদালতে আর্জিও জানাতে পারবেন।
সামনে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ে বিধানসভা ভোট। এই অধ্যাদেশে ভর করে ওই ৪ রাজ্যে মুসলিম মহিলাদের ভোট টানা যাবে, আশা বিজেপির। যেমন এর আগে সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে উত্তরপ্রদেশে মুসলিম মহিলাদের ভোট মিলেছিল।
গত সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী ইনদওরে দাউদি বোহরা মুসলমান সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন ওঠে, বিজেপি কি চাপের মুখে মুসলিমদের একাংশের ভোটও টানতে চায়? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মঙ্গলবার সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতও বলেছেন— হিন্দু রাষ্ট্রে মুসলিমরাও থাকবেন।
গত বছর অগস্টে সুপ্রিম কোর্ট তিন তালাক বলে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রথা বা ‘তালাক-এ-বিদ্দত’কে অবৈধ রায় দেয়। এর পর ডিসেম্বরে তিন তালাককে জামিন-অযোগ্য ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিয়ে তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা করতে বিল আনে সরকার। লোকসভায় বিলটি পাশ হলেও, রাজ্যসভায় আটকে রয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অধ্যাদেশ আনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘ভোটব্যাঙ্ক রাখতে কংগ্রেস ওই বিল সমর্থন করছে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়েই গুরুতর অভিযোগ করছি, সনিয়া গাঁধী মহিলা নেত্রী হয়েও মুসলিম মহিলাদের অধিকারের প্রশ্নে চুপ থেকেছেন। এ বার সনিয়াজির সঙ্গে মায়াবতী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অনুরোধ— আপনারা সমর্থন করুন।’’
আরও পড়ুন: এ শুধুই ভোট রাজনীতি! দাবি ক্ষুব্ধ ল বোর্ডের
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার পাল্টা অভিযোগ, ‘‘তিন তালাকের বিষয়টিকে বিজেপি রাজনৈতিক ফুটবলের মতো কাজে লাগাচ্ছে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘তিন তালাক অসাংবিধানিক বলেই সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করেছে। কিন্তু মোদী সরকার বিলে জামিনের ব্যবস্থা রাখেনি। আবার স্ত্রী-সন্তানের খোরপোশের দায়িত্ব স্বামীর উপরেই চাপিয়েছে। স্বামী জেলে থাকলে খোরপোশ দেবে কে? স্ত্রী-সন্তানের খোরপোশের খরচ জোগাড়ে স্বামীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ব্যবস্থাই বা হয়নি কেন?’’
কংগ্রেসের অভিযোগ, আইন অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। আইনমন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘স্ত্রী, তাঁর রক্তের সম্পর্ক বা বিবাহ সূত্রে আত্মীয়রা থানায় অভিযোগ জানাতে পারবেন। আদালত জামিন দিলেও স্ত্রী-র কথা শুনেই দেবে। বিবাদ আপসে মিটে গেলে, একমাত্র স্ত্রী-ই আদালতে রফার আর্জি জানাতে পারবেন।’’
বস্তুত, অগস্টে বাদল অধিবেশনে সরকারই সংশোধনীগুলি এনেছিল। প্রশ্ন উঠেছে, নভেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাশের অপেক্ষা করা হল না কেন? বিধানসভা ভোটের জন্যই কি তড়িঘড়ি অধ্যাদেশ?
রবিশঙ্করের যুক্তি, ‘‘২০১৭-র জানুয়ারি থেকে অগস্টে সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত ২২৯টি তিন তালাকের খবর মেলে। রায়ের পরেও ২০১টি তিন তালাকের ঘটনা ঘটেছে। থানায় গেলে পুলিশ বলছে, আইন নেই। তাই অধ্যাদেশ।’’ রাষ্ট্রপতির সিলমোহরের পর অধ্যাদেশের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তার পরেই এই আইন কার্যকর হবে। কিন্তু এই আইনে আগের তিন তালাকের শাস্তি হবে না।