ফাইল ছবি
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে বিরোধী দলের জোট ভাঙনের মুখে। এই আবহে জোট ধরে রাখতে আজ তৎপর হলেন টিআরএস নেতা তথা তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ছাড়াও আসন্ন বাদল অধিবেশনে শাসক শিবিরকে বিভিন্ন বিষয়ে কোণঠাসা করে রাখার প্রশ্নে আজ তিনি কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে। কিন্তু গোড়া থেকেই কেসিআর-এর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে অন্য দলগুলির মধ্যে। ফলে তাঁর আহ্বান কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সোমবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বিরোধী শিবির একজোট হয়ে যশবন্ত সিন্হাকে প্রার্থী ঘোষণার পরেই দ্রৌপদী মুর্মুকে শাসক এনডিএ শিবিরের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে বিজেপি। শাসক শিবিরের ওই চালে শুরু থেকেই ভাঙন স্পষ্ট হয়ে যায় বিরোধী শিবিরে। প্রথমে ঝাড়খণ্ডের শাসক দল জেএএম, পরবর্তী সময়ে শিবসেনা ও আজ উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির শরিক এসবিএসপি দলের নেতা ওমপ্রকাশ রাজভড় জানিয়ে দেন, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধি হিসাবে তাঁদের দল দ্রৌপদীকে সমর্থন করবে। সূত্রের মতে, দ্রৌপদীকে সমর্থনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে আম আদমি পার্টির অভ্যন্তরেও।
এই আবহে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আজ বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতাদের ফোন করে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান চন্দ্রশেখর রাও। আজ তিনি মমতা ছাড়াও, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে বিরোধী নেতা যথাক্রমে তেজস্বী ও অখিলেশ যাদব এবং এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারকে ফোন করেন। সূত্রের মতে, তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এক হয়ে লডাইয়ের পাশাপাশি বাদল অধিবেশনে সরকারের ব্যর্থ আর্থিক নীতি, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত, অগ্নিপথ-এর মতো নীতি, বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধীদের এককাট্টা হয়ে লড়াইয়ে নামার পক্ষে সওয়াল করেন। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদী জামানায় যে ভাবে গণতান্ত্রিক আধিকারকে খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সমস্ত বিরোধী রাজ্যগুলিকে সংসদে একযোগে সরব হওয়ার প্রশ্নেও সওয়াল করেন তিনি।
অধিকাংশ মুখ্যমন্ত্রী নীতিগত ভাবে টিআরএস নেতাকে সমর্থন করলেও, সমস্যা হল জাতীয় রাজনীতিতে চন্দ্রশেখর রাওয়ের গ্রহণযোগ্যতা। অতীতে একাধিক বার নিজের স্বার্থে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর নজির রয়েছে রাওয়ের। আগামী বছর তেলঙ্গানায় বিধানসভা নির্বাচন। ওই রাজ্যে খাতায়-কলমে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস হলেও, একের পর এক উপনির্বাচনে বিজেপি জয়ী হওয়ার ঘটনায় রাওয়ের মূল দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। টিআরএস শিবিরও মনে করছে, রাজ্যে বিজেপি ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে, তাতে আগামী নির্বাচনে তাদের আসল প্রতিপক্ষ হতে চলেছে পদ্মশিবার। তাই বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই তিনি চরম বিজেপি বিরোধিতার পথে হেঁটে রাজ্যবাসীকে বার্তা দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন। বিরোধীদের একাংশের মতে, এখন বিজেপি-বিরোধিতা করলেও, আগামী দিনে কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চন্দ্রশেখর রাও যে মোদী-শাহের সঙ্গে হাত মেলাবেন না, এমন নিশ্চয়তা নেই।