নিজের স্বপ্নপূরণ আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য বার বার বিহারে রাজনৈতিক ডামাডোল তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। অষ্টম বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নীতীশের শপথের দিনেই এমন আক্রমণ করলেন তাঁর পুরনো বন্ধু প্রশান্ত কিশোর। একটা সময়ে ভোটকুশলী পিকেকে নিজের দল জেডি (ইউ)-এর সহ-সভাপতি করেছিলেন নীতীশ। এখন অবশ্য আর সেই ঘনিষ্ঠতা নেই। তবে পিকে মনে করেন, গত পাঁচ বছর ধরেই ‘অস্বস্তি’তে ছিলেন নীতীশ কুমার। ২০১৭ সালের পর নাকি স্বস্তিতে থাকতে দেখা যায়নি। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘২০১৩ সাল থেকে বিহারে ছ’বার সরকার গড়ার চেষ্টা করেছেন নীতীশ কুমার। এখান থেকেই স্পষ্ট, কারও রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য একটা রাজ্যে কতখানি রাজনৈতিক ডামাডোল তৈরি হতে পারে।’’
নীতীশের সমালোচনা করতে গিয়ে পিকে বলেন, ‘‘দেড় দশকের যাদব-রাজ, নিন্দুকদের কথায় ‘জঙ্গল-রাজের’ অবসান ঘটিয়ে ‘সুপ্রশাসক’ হিসাবে পটনার মসনদে বসেছিলেন সমাজবাদী নেতা নীতীশ কুমার। কখনও লালু, কখনও বিজেপি, বিভিন্ন শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মসনদে বসলেও নিজের সুপ্রশাসকের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন নীতীশ। কিন্তু সেই ভাবমূর্তি আর নীতীশ আর রক্ষা করতে পারছেন না।’’ নিজের বক্তব্যের সমর্থনে প্রশান্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘‘২০১০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশের দল ১১৭টি আসন পেয়েছিল। ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে সেই সংখ্যাই কমে ৭২ হয়ে যায় আর ২০২০-র নির্বাচনে আরও কমে মাত্র ৪৩। তবে তাতেও মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান তিনি।’’ বিহারে নীতীশের জনসমর্থনে যে ধারাবাহিক ভাবেই ভাঙন ধরেছে, সেই দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন পিকে।
দ্বিতীয় মহাগঠবন্ধন সরকারের রাজনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়ে প্রশান্তের দাবি, আগামী কয়েক মাসে বিহারের নতুন সরকারের কাজকর্মের ওপরই নির্ভর করছে পরের লোকসভা নির্বাচনে মহাগঠবন্ধনের সাফল্য কেমন হবে। তিনি বলেন, ‘‘নতুন সরকার মানুষের প্রত্যাশাপূরণে ব্যর্থ হলে তার নেতিবাচক প্রভাব লোকসভা নির্বাচনে পড়তে পারে।’’ সংবাদমাধ্যমকে প্রশান্ত আরও বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে অস্বস্তিতে ছিলেন নীতীশ কুমার। ২০১৭ সালের পর তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দেখা যায়নি।’’ আদতে বিহারের বাসিন্দা প্রশান্ত বুধবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “বিহারের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কুশীলব হচ্ছেন নীতীশ কুমার। বিহারবাসী এবার অন্তত এ’টুকু প্রত্যাশা করতে পারেন যে, নীতীশ তাঁর নতুন রাজনৈতিক পদক্ষেপে স্থিত হবেন।’’ বিহারবাসী আর রাজনৈতিক অস্থিরতা চাইছেন না বলে দাবি করেছেন পিকে।
বার বার নীতীশের পক্ষ বদলের নেপথ্যকারণ হিসাবে অনেকেই তাঁর জাতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান মুখ হয়ে ওঠার বাসনাকে দায়ী করেছিলেন। পিকে অবশ্য সেই দাবিকে খারিজ করে জানিয়েছেন, বিহার রাজনীতিতে নিজের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতেই নীতীশ এই পদক্ষেপ করেছেন।