আপের থেকে শেখার আছে, মানলেন কারাট

আপ পারে। বাম পারে না। অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লির গদি ছেড়ে দেওয়ার ভুল স্বীকার করেন। আবার গদি ফিরে পেতেও দেরি হয় না। সিপিএম ভুল স্বীকার করে। তা-ও মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে পারে না।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

আপ পারে। বাম পারে না।

Advertisement

অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লির গদি ছেড়ে দেওয়ার ভুল স্বীকার করেন। আবার গদি ফিরে পেতেও দেরি হয় না। সিপিএম ভুল স্বীকার করে। তা-ও মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে পারে না।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন সিপিএমের প্রায় ‘জন্মগত অধিকার’। সেই দুর্নীতি নিয়েই আন্দোলন করে বাজিমাত করে দেয় আম আদমি পার্টি। আর ভরপুর সারদা কেলেঙ্কারির বাজারেও শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোটে ফায়দা তুলতে পারে না সিপিএম। সর্বভারতীয় রাজনীতিতেও দুর্নীতি-বিরোধী প্রধান শক্তি হয়ে উঠতে পারে না তারা। উল্টে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্দেশ দেন— যে সব আসনে বাম প্রার্থী নেই, সেখানে আপ-কেই ভোট দিতে হবে। সেই প্রকাশ কারাটই এ বার বিশাখাপত্তনমে পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে মেনে নিলেন, আম আদমি পার্টির থেকে সিপিএমের শেখার আছে! ‘ওরা পারে, আমরা পারি না কেন?’

Advertisement

আপ-কে নিয়ে সিপিএমের অন্দরমহলের এই প্রশ্ন এ বারের পার্টি কংগ্রেসে বিশাখাপত্তনমের সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই আছড়ে পড়েছিল। অধিবেশনের প্রথম দিনেই প্রশ্নটা তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের অমল হালদার। তাঁর পর দিল্লির সিপিএম নেতা অনুরাগ সাক্সেনা একই প্রশ্ন তোলেন। দু’জনেরই বক্তব্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সিপিএমেরই নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু দল এত বছরেও দিল্লিতে দাঁত ফোটাতে পারল না। উল্টে একই পথে আন্দোলন দু’-দু’বার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে পৌঁছে গেলেন কেজরীবাল।

প্রশ্ন শুনে কারাট কী বলেছেন?

বলেছেন, ‘‘আপ যে ভাবে শহুরে শিক্ষিত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে গিয়েছে, যে ভাবে তারা তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে পেরেছে, তা সিপিএমের কাছে শিক্ষণীয়।’’ যার অর্থ, এ বার সিপিএমের রাজনৈতিক পরীক্ষাগারে আপ-কে নিয়ে গবেষণা শুরু হবে। দলের নতুন স্লোগান, আন্দোলনের নতুন ভাষা তৈরির ক্ষেত্রে আপের নিদর্শনকে সামনে রাখা হবে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

মজার কথা হল, এর আগে রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া দলিলে আপকে নিয়ে খুব বেশি শব্দ ব্যয় করেনি সিপিএম। অণ্ণা হজারের আন্দোলন থেকে তাদের উত্থান, দিল্লিতে বিধানসভা ও পঞ্জাবে লোকসভা ভোটে সাফল্যের কথা উল্লেখ করেও বলা হয়েছিল, ‘বহু জায়গায় মধ্যবিত্ত ও তরুণদের কাছে আপ-এর আবেদন রয়েছে। তবে জনপ্রিয় বিষয়ে আন্দোলন করার বাইরে আপ-এর নীতি ও কর্মসূচি এখনও স্পষ্ট নয়।’ এখানেই আপত্তি উঠেছে সিপিএমের অন্দরমহলে। অভিযোগ উঠেছে, আপ-এর সাফল্য স্বীকার করতে গেলে সিপিএমের ব্যর্থতাই স্পষ্ট হবে। স্পষ্ট হবে যে, তাত্ত্বিক আলোচনাতেই নেতারা এত সময় ব্যয় করে ফেলেন যে, কাজের কাজ আর কিছু হয় না।

কাজের কাজ যে হচ্ছে না, গোপন রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্টেও তা স্পষ্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেই ২০০২-এ অসম, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রকে দলীয় সংগঠন বাড়ানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছিল। ১৩ বছর কেটে গেলেও এই রাজ্যগুলিতে সিপিএমের বৃদ্ধি আশানুরূপ নয়। ফলে এই অগ্রাধিকারের তালিকা বাছাইয়ের পদ্ধতিটাই বদলে ফেলার ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে।

ভাবনা অনেক। তবু কাজের কাজ হচ্ছে না কেন?

কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বললেন, ‘‘আমরা পার্টির দলিলে অনেক ভুলের কথা স্বীকার করি। কিন্তু মানুষের কাছে গিয়ে, তাঁদের দরজায় ঘুরে ঘুরে ‘ভুল হয়েছিল’ বলে হাতজোড় করে ক্ষমা চাই না। এখানেই কেজরীবালের সঙ্গে আমাদের ফারাক। কেজরীবাল প্রথম বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেও ছেড়ে দিয়েছিলেন। মানুষ বিরক্ত হয়েছিল। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে তিনি ঘুরে ঘুরে বলেছেন, ‘ভাইসব, একবার ভুল হয়ে গিয়েছে।’ ওই ভুল আর জীবনে করব না। তার পরেই মানুষ আবার তাঁকে ফিরিয়ে এনেছে।!’’

নেতাটি আশাবাদী, ভুল স্বীকারের ক্ষেত্রে এই আপ-মডেল মেনে চললে তাঁরাও ফিরে পাবেন সমর্থন। সেটা পশ্চিমবঙ্গেই হোক, বা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে। নজরে তাই কেজরীবাল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement