ঘাঁটছেন অতীত। কিন্তু নজর আসলে ভবিষ্যতে!
সংবিধানের ৩৫৬ ধারা গায়ের জোরে প্রয়োগ করে দেশের প্রথম নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকারকে ফেলে দিয়েছিল কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার। সেই ৬০ বছর আগের ঘটনার হঠাৎই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে কলম ধরলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস এবং সিআইএ-র চক্রান্তের শিকার হয়েছিল ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদের সরকার। এখন দেশে আর একটি আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়ে এই ইতিহাস মনে রেখে শিক্ষা নিতে হবে বলে কারাটের মত।
একটি সর্বভারতীয় পত্রিকায় ইএমএস-শিষ্য কারাট যা লিখেছেন, তার সবই বহুচর্চিত অভিযোগ। কিন্তু বাম রাজনীতিতে চর্চা শুরু হয়েছে, তাঁর এ বারের ওই নিবন্ধের সময় নিয়ে। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের রাজত্বের বিরুদ্ধে বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে কংগ্রেসকে সঙ্গে নেওয়ার দাবি প্রতি দিনই জোরালো হচ্ছে। হায়দরাবাদে আগামী এপ্রিলের পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএমের অন্দরেও এই প্রশ্নে বিতর্ক তুঙ্গে। আর কেরলে ইএমএস সরকারকে ভেঙে দেওয়া কংগ্রেসের অতীতের ‘দুর্বল’ জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম। ঠিক এই সময়ে কারাট কেন কংগ্রেসের সেই দুর্বল জায়গা আঙুল দিয়ে চিহ্নিত করতে গেলেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক বর্ষীয়ান সদস্যের ব্যাখ্যা, ‘‘কেরল-সহ দক্ষিণ ভারতের লবির ভূমিকা দলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেরলে প্রথম কমিউনিস্ট সরকারকে ফেলে দিতে কংগ্রেসের সেই সময়ের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই উদ্দেশ্য আছে!’’ চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরির মতের পক্ষে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার জন্য সওয়াল করেছিলেন ৩২ জন নেতা। তাঁদের মধ্যে টমাস আইজ্যাকের মতো কেরলের নেতারাও ছিলেন। যে কেরল দলের অন্দরে বরাবর কারাটের শক্তির কেন্দ্র। দলের একাংশের মতে, এখন কেরলের ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়েই সে রাজ্যের নেতাদের কংগ্রেস-বিরোধী বার্তা দিতে চেয়েছেন কারাট। যদিও গত সপ্তাহে কলকাতায় এসে খোদ কারাটই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মেনে কংগ্রেসের জন্য দরজা খুলে রাখার কথা বলেছিলেন!
ইএমএসের সরকার ভেঙে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির জন্য কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা টেলিফোনে দিল্লির নির্দেশ নিয়ে রাজ্যপালের সুপারিশ তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে নিবন্ধে অভিযোগ করেছেন কারাট। প্যাট্রিক ময়নিহানের বই উল্লেখ করে দেখিয়েছেন, কমিউনিস্ট শাসনের পতন ঘটাতে সিআইএ কী ভূমিকা নিয়েছিল। আর শেষে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ছয় দশক পরে বাম ও গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার সময়ে ইএমএস সরকারের কথা মনে রাখতে হবে। দক্ষিণপন্থী শক্তি কী ভাবে আক্রমণ চালাতে পারে, তা-ও মাথায় রাখতে হবে।
যা শুনে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘‘কারাটের বার্তা খুব পরিষ্কার— একটা আধিপত্যবাদী শক্তিকে দিয়ে আর একটা আধিপত্যবাদী শক্তির মোকাবিলা হয় না!’’