কংগ্রেসের নির্বাচন কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সমাজবাদী পার্টি (সপা)-র প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদবের বৈঠক ঘিরে উত্তরপ্রদেশে মহাজোটের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রকাশ্যে তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না দু’পক্ষই। কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশ কমিটির প্রধান রাজ বব্বর জানিয়েছেন, দলের প্রতিনিধি হিসাবে প্রশান্ত কিশোর এই বৈঠক করেননি। সপা সূত্রেও বলা হচ্ছে, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এখনও কিছুই অগ্রগতি হয়নি।
মঙ্গলবার দিল্লিতে মুলায়মের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা কথা বলেন প্রশান্ত কিশোর। সপা নেতা অমর সিংহও সেই বৈঠকে ছিলেন। কিন্তু এই বৈঠকের পরে এক দিকে যেমন দুই দলের সম্ভাব্য জোট নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে, তেমনই সপার একাংশের নেতাদের মধ্যেও প্রার্থী হতে না-পারার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এমন জল্পনাও ছড়িয়েছে, উত্তরপ্রদেশের উত্তরাংশের বেশ কিছু আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার জন্য প্রশান্ত কিশোর মুলায়মের কাছে তদবির করেছেন। এমনিতেই কাকা-ভাইপো অখিলেশ ও শিবপাল যাদবের দ্বন্দ্বে জেরবার সপা নেতৃত্ব। তার ওপর নতুন চাপ সামাল দিতে তাই দলের তরফ থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগের বিষয়টি আপাতত ধামাচাপা দিয়ে রাখার সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
বিহারে চির প্রতিদ্বন্দ্বী লালু প্রসাদের আরজেডি ও নীতীশ কুমারের জেডিইউ-কে জোটে মিলিয়ে তার সঙ্গে কংগ্রেসকে নিয়ে মহাজোট গঠনের কৃতিত্ব দেওয়া হয় প্রশান্ত কিশোরকে। বিহারে বিজেপিকে ঠেকাতে এই মডেল কার্যকরী হওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনেও সেই মহাজোট রচনার চেষ্টা করছেন কংগ্রেসের নিযুক্ত এই পেশাদার কৌশলবিদ। কিন্তু বিহারের ধাঁচে মহাজোট তৈরি করে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই উত্তরপ্রদেশে সম্ভব নয় বলে সোমবার জানিয়ে দিয়েছেন জেডিইউ সভাপতি নীতীশ কুমার। তাঁর দাবি— উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম-মায়াবতী কখনওই এক ছাতার তলায় আসবেন না। জেডিইউ তাই উত্তরপ্রদেশে আলাদা লড়াই করবে।
তবে উত্তরপ্রদেশে মহাজোটের পক্ষেই সওয়াল করে চলেছে নীতীশের জোটসঙ্গী আরজেডি। শনিবার লখনউয়ে সপা-র রজতজয়ন্তী সমারোহে লালু প্রসাদ থাকছেন বলে জানিয়ে তাঁর ছেলে নীতীশের মন্ত্রিসভার উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বুধবার জানিয়েছেন, মুলায়মের নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের আস্থা রয়েছে। এই সমারোহকেই বিহারে মহাজোটের সূচনা করে তুলতে চাইছেন সপা নেতৃত্ব। মুলায়মের দূত হিসাবে কয়েক দিন আগেই পটনায় এসে লালুর সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন অমর সিংহ। কংগ্রেসও এই সপা-র পাশে রয়েছে। দিন কয়েক আগেই অখিলেশ যাদবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাহুল গাঁধী।
তবে নীতীশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন সপা-র সমারোহে তিনি থাকছেন না। এ জন্য মুলায়মের সঙ্গে তাঁর শীতল সম্পর্কই কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিহারের মহাজোটে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নীতীশের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছিল সপা। সেই প্রত্যাখ্যানের জন্য মুলায়মকে এখনও ক্ষমা করতে পারেননি নীতীশ। মুলায়ম যদিও সেই ‘ভুল’ সিদ্ধান্তের দায় দলের তখনকার নেতা রামগোপাল যাদবের ওপর চাপিয়ে বলছেন, এই সব কারণেই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু নীতীশ তাতে ভোলেননি। তাঁর দল ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে জোট তৈরি করেছে। সেই জোটে রয়েছে অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোকদলও। অজিত সিংহের ছেলে জয়ন্ত চৌধুরীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে কয়েকটি সভাও করেছে নীতীশের জোট।
কিন্তু গত কাল প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সমাজবাদী নেতৃত্বের বৈঠকের পরে নতুন রাজনৈতিক অঙ্ক তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় লোকদলও সপা-কংগ্রেস-আরজেডি-র মহাজোটে যোগ দিতে পা বাড়িয়ে রয়েছে বলে খবর। সে ক্ষেত্রে নীতীশের জোট মাঠে মারা যাবে।
নীতীশ কুমার তখন কী করবেন? তেমন অবস্থায় তিনি বহুজন সমাজ পার্টির সঙ্গে যেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে। কিন্তু মায়াবতী কি তাঁকে আসন ছাড়বেন? এখনও পর্যন্ত একলা চলার কথাই কিন্তু বলে চলেছেন দলিত নেত্রী।