সঙ্গীতশিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তীকে স্বীক়ৃতি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলাদের হাতে ছেড়ে দেবেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়া। গত মঙ্গলবারেই এই কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তার পরেই পাল্টা কৌশল তৈরি করে ফেলেছিল কংগ্রেস।
টুইটারে কংগ্রেস লিখেছিল, ‘‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী মোদী, অনেক শুনেছি আপনার ‘মনের কথা’। এ বার শুনুন মহিলাদের কথা।’’ মহিলারা কেমন আছেন, কী চান, প্রত্যাশা পূরণ হল কি না— এমন অনেক প্রশ্ন নিয়ে পথে-ঘাটে আম মহিলাদের কাছে পৌঁছে যায় কংগ্রেস। রাহুল গাঁধী টুইট করেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে উদ্ধৃত করে: ‘‘শক্তি বলতে যদি নৈতিক শক্তি বোঝায়, তা হলে পুরুষদের থেকে অনেক উঁচুতে মহিলারা।’’ সফল মহিলারা প্রধানমন্ত্রীর সোশ্যাল মিডিয়া ‘দখল’ করার আগেই রাহুল নিজের টুইটে ইন্দিরা গাঁধী, প্রতিভা পাটিল, মীরা কুমার, শীলা দীক্ষিত থেকে হিমা দাসদের ছবি মেলে ধরেন। সব ‘বোনেদের’ নারীত্বের উৎসব করে সাহসী হতে বলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। মহিলাদের ক্ষমতায়নের সূত্রপাত যে নেহরু-অম্বেডকরের হাত ধরেই, সে কথাও প্রচার করে কংগ্রেস।
কিন্তু মোদী হাঁটলেন অন্য পথে। সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। তার পরেই নারী-দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ঘোষণা করলেন, এ বার তিনি ‘সাইন-অফ’ করছেন। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল সাত নারী নিজেদের কথা শোনাবেন। এঁদের কেউ অনাহারীদের মুখে খাবার তুলে দেন। কেউ হার মানেননি বিস্ফোরণে দুটি হাত খুইয়েও। কেউ মহিলাদের রোজগারের দিশা দেখিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘নারীশক্তি’ সম্মান পাওয়া মহিলাদের সঙ্গেও মোদী দেখা করেন নিজের বাসভবনে। তাঁদের কথা শুনলেন। বললেন নিজের কিছু কথাও।
রাষ্ট্রপতির স্বীকৃতি (নারীশক্তি পুরস্কার)
• সর্দারনী মান কৌর। চণ্ডীগড়ের প্রবীণা অ্যাথলিট।
• চামি মুর্মু। ঝাড়খণ্ডের পরিবেশকর্মী।
• নীলজা ওয়াংমো। লে-র রেস্তরাঁ মালকিন।
• পদলা ভূদেবী। শ্রীকাকুলমের জনজাতি অধিকার কর্মী।
• রশ্মি উর্ধওয়ারদেশে। পুণেতে গাড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
• কার্তায়িনী আম্মা। আলাপুঝায় সাক্ষরতা মিশনে ৯৮ বছরে ৯৮% নম্বর।
• তাশি এবং নুঙ্গশি মালিক। বাড়ি দেহরাদূন। এভারেস্টজয়ী প্রথম যমজ মেয়ে।
• অবনী চতুর্বেদী, ভাবনা কান্ত, মোহনা সিংহ। মিগ-২১ ‘বাইসন’ ওড়ানো প্রথম তিন ভারতীয় মেয়ে।
এ ছাড়া আরিফা জান, কলাবতী দেবী এবং বীণা দেবী।
মোদীর ‘অনুপ্রেরণা’
• স্নেহা মোহনদাস, চেন্নাই: রান্না করা খাবার পৌঁছে দেন গৃহহীনদের কাছে।
• মালবিকা আইয়ার, বিকানের: বিস্ফোরণে দু’হাত হারান। বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অধিকার নিয়ে কাজ।
• আরিফা জান, শ্রীনগর: কাশ্মীরি কার্পেট (নমদা) শিল্পের পুনরুজ্জীবনে মহিলা শিল্পীদের নিয়ে কাজ।
• কল্পনা রমেশ, হায়দরাবাদ: নিজের বাড়িতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ। জড়িয়ে নিয়েছেন পাড়াকেও।
• বিজয়া পওয়ার, মহারাষ্ট্রের বীড়: ‘বানজারা’ হস্তশিল্পী। কয়েক হাজার মহিলাকে নিয়ে কাজ করছেন।
• কলাবতী দেবী, কানপুর: রাজমিস্ত্রি। অন্তত ৪০০০ শৌচালয় বানিয়েছেন।
• বীণা দেবী, মুঙ্গের: মাশরুম চাষ করেন ঘরের মধ্যে, এমনকি খাটের নীচেও। প্রশিক্ষণও দেন।
আর এখানেই নাম না-করে বিধলেন কংগ্রেসকে। বিশেষ করে গাঁধী পরিবারকে। মোদী বললেন, ‘‘এই মহিলাদের কথায় কত আত্মবিশ্বাস। ভারত কত বৈচিত্রে ভরা। এক সময়ে মনে করা হত, ভারত শুধু বড় বড় পরিবার, বড় শহর ও কিছু খাস লোকজনের। এখন দেখা যাচ্ছে, দেশ খাস লোকেদের নয়— ছোট পরিবার, ছোট গ্রামের মানুষেরাও কিছু না-কিছু করছেন। এত আত্মবিশ্বাস সেখানে। এঁরা অন্যকে দিশা দেখাচ্ছেন। এই জ্ঞান কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, জীবনে এগোতে গিয়ে সঞ্চয় হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ইয়েস ব্যাঙ্ক-কাণ্ডে প্রিয়ঙ্কাকে টার্গেট করল বিজেপি
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা যদিও অনেকে মনে করছেন, রাজনীতিতে মহিলাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা খুব কমই হয়। এক সপ্তাহ ধরে মোদী সরকার মহিলাদের নিয়ে উৎসব করছে, কংগ্রেসও পাল্টা কৌশল নিচ্ছে। কিন্তু মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে কেউ তৎপর নয়। সকলেই আসলে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে দেখে।
কংগ্রেসের আহমেদ পটেল যদিও বলেছেন, ‘‘মহিলাদের নিয়ে উৎসব এক দিনেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।’’ মতান্তরও বেধেছে কংগ্রেসে। শশী তারুর চান, ঋতুকালীন সময়ে সরকারি-বেসরকারি দফতরে কাজ করা মহিলাদের ছুটি দেওয়া হোক। কংগ্রেসের নেত্রী শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় ও সুস্মিতা দেবের বক্তব্য, যন্ত্রণা নিয়েও মহিলারা কাজ করেন। এমন আইন এলে মহিলাদের কাজ না-নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ এক অনুষ্ঠানে বলেন, বাহিনীর কোনও দরজাই আর নারীদের জন্য বন্ধ থাকা উচিত নয়।