অযোধ্যার নির্মিয়মান রাম মন্দির। —ফাইল চিত্র।
রামমন্দিরের উদ্বোধনে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চর্চা নিরন্তর। কংগ্রেসের মধ্যে রয়েছে দোলাচল, বামেরা দ্বিধাহীন ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তৃণমূল নেত্রী ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। তারই মধ্যে আমন্ত্রণ পাওয়া এবং না পাওয়া নিয়েও জটিলতা কম নয়। যেমন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার আজ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে প্রাণ প্রতিষ্ঠা মহোৎসবে উপস্থিত থাকার কোনও আমন্ত্রণপত্র আসেনি। অমরাবতীতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার স্পষ্ট ধারণা নেই যে বিজেপি গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করছে কি না। আমরা খুশি যে মন্দির হচ্ছে। অনেকেরই তাতে অবদান রয়েছে।” তাঁকে যে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এ কথা বলে পওয়ারের মন্তব্য, “আমি দু’-তিন জায়গায় যাই নিজের বিশ্বাসের কারণে। কিন্তু জনগণের সামনে তার প্রচার করি না। এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার।”
একই ভাবে কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, “আমি জানি না কে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং কে পাননি। তবে একটা সত্য আমি নিশ্চিত ভাবে জানি যে বিজেপি গোটা বিষয়টিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে।” পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর আজ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “মন্দিরে কেউ যাবেন কি না সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। মন্দির কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, যেখানে বিরাট রাজনৈতিক সভা হবে এবং নিজেদের সুবিধার্থে নেতারা বক্তৃতা দেবেন। মন্দিরে মানুষ যান প্রার্থনা করতে, আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ করে একটি বন্ধনীর মধ্যে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। আপনি যদি যান তা হলে আপনি হিন্দু আর না-গেলে হিন্দু বিরোধী— ব্যাপারটা তো এ রকম নয়।” শশী জানিয়েছেন, তাঁকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি, ফলে যাওয়ার প্রশ্ন উঠছে না। আবার এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদবকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি খোলসা না করে শুধু বলেছেন, “আমরা সবাই বিশ্বাস করি তুমি তখনই দর্শন পাবে যখন ঈশ্বর তোমাকে ডাকবেন। আমি বাড়ি থেকে বাইরে পা রাখি প্রার্থনা সেরে। এখন আপনারাই বলুন কোন ঈশ্বরকে আমার দেখতে যাওয়া উচিত?” তবে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে থাকছেন বলে জানিয়েছেন।
সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রে রামমন্দির ট্রাস্ট-এর আমন্ত্রণপত্র পাঠানো নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য উঠে আসছে। একাংশের মতে, পওয়ারের এনসিপি-র শরিক শিবসেনা (উদ্ধবপন্থী) দাবি করছে, উদ্ধব আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তাঁর দলের থেকেই বলা হচ্ছে, অযোধ্যা যাওয়ার জন্য উদ্ধব ঠাকরের আমন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না। দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউত আগে বলেছিলেন, “অযোধ্যায় উদ্ধবের আমন্ত্রণের প্রয়োজন নেই। আমরা বিজেপির আগে থেকে অযোধ্যায় আছি।” আজ তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, “পুরোটাই রাজনীতি করা হচ্ছে। বিজেপির এই অনুষ্ঠানে কে-ই বা যেতে চাইবে। এটা জাতীয় অনুষ্ঠান নয়, বিজেপির অনুষ্ঠান। তার মধ্যে পবিত্রতা কোথায়। বিজেপির অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে অযোধ্যা যাব।” বামেরা জানিয়েছে, তারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না। সিপিএমের বক্তব্য, বিজেপি-আরএসএস একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বানাচ্ছে।