কোঝিকোড়ে বিক্ষোভ সামাল দিতে ব্যস্ত পুলিশ। ছবি: পিটিআই
বাবা আবার ‘নির্বিকল্প সমাধি’ থেকে উঠবেন, এই দাবি করে বালক ব্রহ্মচারীর দেহ তখন সৎকার করতে বাধা দিচ্ছিলেন তাঁর ভক্তেরা। সৎকারের জন্য শেষ পর্যন্ত পুলিশি অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলার তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যের ডাকসাইটে মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘অ্যাকশন হবে ‘জুগনু’র (বলিউডি ছবি) মতো! দেখি কে আটকায়!’’
শবরীমালায় ‘ভক্ত’দের থাবা এড়িয়ে মন্দিরে দুই পূজারিনির প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ দিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করেছিল কেরলের বাম সরকারও। তবে আগাম ঘোষণা করে কোনও অভিযান নয়। দক্ষিণী রাজ্যে পুলিশকে কাজ করতে বলা হয়েছিল একেবারে গোপনে। বরং, খবর ‘ফাঁস’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বাছাই করা কয়েক জন পুলিশ-কর্তা ছাড়া বাকি কাউকে জানতেই দেওয়া হয়নি পরিকল্পনার কথা।
আয়াপ্পা দর্শনে গিয়ে এক বার ফিরে আসা এবং তার পরে গোপন ডেরায় থাকার কথা নিজেরাই জানিয়েছেন মন্দিরে প্রবেশকারী দুই মহিলা বিন্দু ও কনকদুর্গা। সরকারি ও রাজনৈতিক সূত্র বলছে, মাঝের ১০ দিনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একাধিক আস্তানায় রাখা হয়েছিল বিন্দুদের। তাঁদের ঘিরে ছিলেন সাদা পোশাকের ২০ জন মহিলা পুলিশকর্মী। নববর্ষের দিনে কেরলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ৬২০ কিলোমিটার লম্বা ‘বনিতা মতিল’ (নারী প্রাচীর)-এ যখন যাবতীয় নজর, সেই রাতেই দুই পূজারিনিকে শবরীমালার দিকে রওনা করার জন্য বাছাই করা পুলিশ-কর্তাদের সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয় রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে।
আরও পড়ুন: পঞ্জাবে ভোটের প্রচার শুরু প্রধানমন্ত্রীর
সূত্রের খবর, শবরীমালায় দেবতা দর্শনে প্রথম বার ব্যর্থ হওয়ার পরে বিন্দু ও দুর্গাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কোট্টয়ম মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই দু’জনে ইচ্ছাপ্রকাশ করেন, তাঁরা আবার আয়াপ্পা দর্শনের চেষ্টা করতে চান। তার পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় কোট্টয়মের পুলিশ সুপার হরিশঙ্করকে। হাসপাতাল থেকে বার করে বিন্দুদের যখন এক একটা ‘সেফ হাউসে’ রাখা হচ্ছে, সেই সময়েই কেরল পুলিশের ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স), কোঝিকোড়ের এসপি (গ্রামীণ), অপরাধ দমন শাখার দুই এসপি এবং রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের এক কর্তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় গোটা পরিকল্পনা। পম্বার বেস ক্যাম্প থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে বিন্দুরা যখন মন্দিরের দিকে যাত্রা শুরু করেন, তখন পথে হাজির ছিলেন ওই কয়েক জন পুলিশ-কর্তাই। বেশ বদলে।
আরও পড়ুন: খনি-কাণ্ডে রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালত
জঙ্গল পথ পেরিয়ে দেবস্বম বোর্ডের কর্মচারীদের জন্য মন্দিরে যাওয়ার যে রাস্তা আছে, সেখান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাদের। ভিআইপি গেট দিয়ে বুধবার কাকভোরে ভিতরে ঢুকে তাঁরা আয়াপ্পা দর্শন করেন। ভিতরে দর্শনার্থীরা কেউ তাঁদের বাধা দেননি। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘‘ওঁদের হেলিকপ্টারে করে নামানো হয়নি! ভক্তেরাই সাহায্য করেছেন।’’ দর্শন সেরে একই পথ ধরে নেমে আসেন দুর্গা ও বিন্দু।
কেরলের এলডিএফ সরকারের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন যা বিশৃঙ্খলা করছে, সেই কারণেই কিছু সতর্কতা প্রশাসনকে নিতে হয়েছিল। কাউকে জোর করার প্রশ্ন নেই।’’ এলডিএফের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি অবশ্য মনে করছেন, ‘‘শবরীমালায় মহিলাদের প্রকাশ্যেই প্রবেশ করা উচিত। গোপনে নয়!’’