—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বাড়িতে মূল্যবান জিনিসপত্র আছে? পাড়ায় চুরিডাকাতি বেড়ে গিয়েছে, তাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন? থানার উপর ভরসা রাখতে পারছেন না? নিজেই বাড়িতে পাহারায় বসাতে পারেন পুলিশ। থানা থেকে উর্দিধারী পুলিশকর্মী এসে বাড়ি পাহারা দেবেন। সঙ্গে থাকতে পারে পুলিশ কুকুরও। পুলিশের যাবতীয় সরঞ্জাম, পিস্তল ব্যবহার করা হতে পারে আপনারই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে। এ দেশেরই এক রাজ্যে রয়েছে তেমন ব্যবস্থা। এমনকি, চাইলে সেখানে আস্ত থানাটাই ভাড়া হিসাবে নেওয়া যায়।
কেরলে পুলিশ ভাড়া নেওয়ার রীতি প্রচলিত। সেখানে টাকা দিয়ে ‘নিরাপত্তা’ ভাড়া নেওয়া যায়। টাকার অঙ্ক যত বাড়বে, পরিষেবা ততই ত্রুটিমুক্ত হবে। ভাড়ার ‘রেট চার্ট’ও প্রস্তুত। কেরল সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্পের অধীনে এই পুলিশ ভাড়া দেওয়া হয়।
ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার কোনও পুলিশ আধিকারিককে ভাড়া নিতে চাইলে দিনে ৩,০৩৫ থেকে ৩,৩৪০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হবে। তবে সস্তার বিকল্পও আছে। দিন প্রতি ৬১০ টাকায় মেলে কনস্টেবল।
পুলিশের সঙ্গে পুলিশ কুকুরও ভাড়া নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে আরও বেশি খরচ করতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ পুলিশ কুকুরের ভাড়া ৭,২৮০ টাকা প্রতি দিন। এ ছাড়া, পুলিশের ব্যবহৃত বিভিন্ন বেতার সংযোগের যন্ত্রপাতি ভাড়া নিতে হলে দিনে ১২,১৩০ টাকা খরচ হবে। আস্ত থানাটাও কেউ চাইলে ভাড়া নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে খরচ হবে দিনে ১২ হাজার টাকা।
কেন পুলিশের চেয়েও পুলিশ কুকুরের ভাড়া বেশি, কেনই বা পুলিশি সরঞ্জামের জন্য থানার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হবে, সরকারি নির্দেশে তা স্পষ্ট নয়।
পুলিশ ভাড়া দেওয়ার এই প্রকল্পে কেরল সরকারের ‘খদ্দের’ কারা? সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, বিভিন্ন সিনেমা, থিয়েটারের উদ্যোক্তা বিনোদনমূলক কর্মসূচির প্রয়োজনে থানা বা পুলিশ ভাড়া নিতে পারেন। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত ভাবে কেউ চাইলেও ভাড়া দেওয়া হয়।
সরকারের এই প্রকল্পে অনেকেই অসন্তুষ্ট। সরকারের অভ্যন্তরেই অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। অনেকেই মনে করেন, সিনেমা, থিয়েটারের প্রয়োজনে উদ্যোক্তাদের থানা বা পুলিশ এ ভাবে ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া, এতে সরকারি সম্পত্তি, সরকারি আধিকারিকদের মর্যাদাও ক্ষুণ্ণ হয়। পুলিশের ব্যবহৃত সরঞ্জাম, পিস্তল ইত্যাদি যাকে তাকে ভাড়া দেওয়া বিপজ্জনকও বটে।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির লোকজনও জানান, তাঁদের অভিনয়ের প্রয়োজনে থানা ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ইন্ডাস্ট্রিতেই সেই ব্যবস্থা রয়েছে।
কেরল সরকারের এই পুলিশ ভাড়া দেওয়ার প্রকল্পকে কাজে লাগান শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা। তাঁরা ব্যক্তিগত কাজে ইচ্ছামতো পুলিশকে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। গত বছরেই এক শিল্পপতির কন্যার বিয়েতে চার পুলিশকর্মীকে ‘ডিউটি’ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের পক্ষে এটি খুব একটা সম্মানজনক নয়। তাই বিতর্কও হয় বিস্তর।