প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
নতুন বছরের গোড়া থেকেই তামিল জনমানসের আস্থা অর্জনে নেমে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামিকাল একাধিক সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনে তামিলনাড়ু সফরে যাচ্ছেন তিনি। যা নতুন বছরে তাঁর প্রথম রাজ্য সফর হতে চলেছে।
মাস কয়ের আগেই ওই রাজ্যের বিরোধী দল এডিএমকে-এর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। বিজেপির লক্ষ্য, ওই রাজ্যে একার শক্তিতে দলের ভিত মজবুত করা। সেই কারণে ওই রাজ্যে আপাতত একলা চলো নীতি নিয়ে এগোনোর কৌশল নিয়েছে দল। লক্ষ্যপূরণে নতুন বছরের গোড়া থেকেই নেমে পড়ার কৌশল নিয়েছে শাসক শিবির। আগামিকাল তামিলনাড়ুতে রেল, সড়ক, উচ্চশিক্ষা, জাহাজ শিল্প মিলিয়ে মোট ১৯,৮৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের লোকসভার আগে শিলান্যাস করতে চলেছেন মোদী। লক্ষ্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বার্তা দিয়ে মানুষের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব খুব ভাল করেই জানেন, আসন্ন লোকসভায় উত্তর ও পশ্চিম ভারতে নতুন করে বিজেপির আসন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। উল্টে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ায় কমতে পারে আসন সংখ্যা। সেই ঘাটতি মেটাতে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্রগুলিকে পাখির চোখ করছেন বিজেপি নেতারা। দক্ষিণ ভারতে গত লোকসভা ভোটে কর্নাটকে ভাল করেছিল বিজেপি। বিধানসভা ধরে রাখতে না পারলেও, এ বারও গত বারের মতো ভাল ফলের লক্ষ্যে জেডিএসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বিজেপি। অন্য দিকে পাঁচ বছর আগে তেলঙ্গানাতে চারটি লোকসভা আসন জিতেছিল বিজেপি। এ বার কংগ্রেস ক্ষমতায় এলেও, বিজেপির ভোট প্রাপ্তি দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে ওই রাজ্যেও ভাল ফলের আশা করছে দল।
এর পাশাপাশি তামিলনাড়ুতে ভাল ফলের লক্ষ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে চলেছে বিজেপি। সাংস্কৃতিক ও বিশিষ্ট জনেদের মধ্যে দলীয় উপস্থিতিকে পৌঁছে দিতে গত দু’বছর ধরে কাশী-তামিল সঙ্গম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। লক্ষ্য দু’প্রান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমানো। ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করে সংস্কৃতি ও তামিল ভাষার মধ্যে যেমন যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে তেমনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সভ্যতাগত যোগাযোগ ও সমন্বয়ের উপরে জোর দিয়েছে গেরুয়া শিবির। শুধু তাই নয়, তামিলনাড়ু থেকে বহু শিক্ষক-গবেষক, কলেজ পড়ুয়াকে বিশ্বনাথ করিডর ও অযোধ্যার রামমন্দির ঘুরিয়ে দেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়নের বার্তা দিয়ে তামিলনাড়ুতে নিজেদের জমি শক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোনোর কৌশল নিয়েছে দল। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘দু’প্রান্তের মানুষের মধ্যে মানসিক দূরত্ব ঘোচানোই আমাদের প্রথম লক্ষ্য। তাই এক দিকে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের কাজ যেমন চালু রয়েছে। তেমনি রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে কেন্দ্র যে দায়বদ্ধ, সেই বার্তা আগামিকালের প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকেই রাজ্যবাসীকে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’’