প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার মঞ্চ থেকে ধারাবাহিক ভাবে সরকারি নীতির ঘোষণা করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আসন্ন ১৫ অগস্টের বক্তৃতায় লোকসভা নির্বাচনী প্রচারের শিঙা ফুঁকতে চলেছেন তিনি। এক দিকে কংগ্রেসের ইতিহাস এবং পূর্বতন শাসনকে আক্রমণ করবেন, অন্য দিকে তাঁর সরকারের গত ন'বছরের বিভিন্ন প্রকল্প ধরে ধরে ব্যাখ্যা করবেন সাধারণ এবং গরিব মানুষের জীবন এই যোজনাগুলির কল্যাণে কী ভাবে বদলে গিয়েছে। বোঝাবেন, সরকার দরিদ্র মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কী ভাবে পালন করেছে। সূত্রের খবর, নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বের তৃতীয় দফার কথা তুলে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতি হিসাবে ভারতকে গড়ে তোলার স্বপ্নও মোদী দেখাবেন দেশবাসীকে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, শুধু লালকেল্লার বক্তৃতাই নয়, বিভিন্ন রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন এবং তার পরে চব্বিশের ভোটে বিজেপির প্রচারনীতি কী হবে, তার ড্রেস রিহার্সাল মোদী করে নিয়েছেন সংসদের সদ্যসমাপ্ত বাদল অধিবেশনে। লোকসভায় বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের জবাবি বক্তৃতায় টানা আড়াই ঘণ্টার কাছাকাছি বলতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। সেখানে তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে, লালকেল্লা থেকে দেশের উন্নতি এবং প্রগতি নিয়ে বিশদে বলার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।
সরকারি সূত্রের খবর, ১৫ অগস্ট 'মেক ইন ইন্ডিয়া'র উপর জোর দিতে দেখা যাবে মোদীকে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত যে কতটা আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে, তার বিশদ বিবরণ থাকবে সেখানে। পাশাপাশি গুজরাত নির্বাচনের মতোই চব্বিশের লোকসভা ভোটেও জনজাতি সম্প্রদায়ের উপর বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দলকে দিয়েছেন তিনি। জনজাতি ছাড়াও, দলিত বা তফসিলি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি, গরিব এবং সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ কল্যাণমূলক যোজনার প্রচার জায়গা পাবে তাঁর বক্তৃতায়। তাঁর সরকার ইতিমধ্যেই এই শ্রেণির মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নত করার জন্য কী কী করেছে তা বলবেন মোদী।
স্বদেশি এবং আত্মনির্ভরতার মিশেল ঘটাতে স্থির হয়েছে, এই প্রথম এএলএইচ ধ্রুব হেলিকপ্টারে আকাশ থেকে অনুষ্ঠানস্থলের উপর ফুলের পাপড়ি ছড়ানো হবে। এর আগে পর্যন্ত রাশিয়ার মিগ-১৭ চপার ব্যবহার করা হত পুষ্পবৃষ্টির জন্য। আনুষ্ঠানিক তোপধ্বনির জন্য এত দিন ব্যবহৃত হত ব্রিটিশ বন্দুক। কিন্তু গত বছর থেকেই মোদীর নির্দেশে ব্রিটিশ বন্দুক সরিয়ে ভারতে তৈরি বন্দুক ব্যবহার করা হচ্ছে। লোকসভার বক্তৃতায় মোদীকে হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেডের (হ্যাল) সপ্রশংস উল্লেখ করতে শোনা গিয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে তারই সিলমোহর দেখা যাচ্ছে গত বছর থেকে।
প্রসঙ্গত, গত বছর স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় মোদী ডাক দিয়েছিলেন ঔপনিবেশিকতার সমস্ত চিহ্ন মন থেকে দূর করতে, দেশের সাংস্কৃতিক পরম্পরায় গর্বিত হতে। আগামী ২৫ বছরে (স্বাধীনতার অমৃতকাল) ভারতকে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বার অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১৫ অগস্ট 'স্বচ্ছ ভারতে মিশন'-এর কথা ঘোষণা করেছিলেন মোদী লালকেল্লা থেকে। তার পরের স্বাধীনতা দিবসে 'স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া' ঘোষণার পাশাপাশি কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেন। তার পরের বছর কাশ্মীর এবং পাকিস্তান ছিল তাঁর জাতীয়তাবাদী উদ্দীপনার মন্ত্র। ২০১৭ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ৭৫ বছর পূর্তির সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করে 'নতুন ভারত' গড়ার কথা বলতে শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। এ ভাবেই ২০১৮ সালে আয়ুষ্মান ভারত, ২০১৯ সালে সেনা ক্ষমতার সংস্কার, ২০২১ সালে 'ভোকাল ফর লোকাল' নীতির ঘোষণা করেছিলেন মোদী স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চ থেকে। মাঝে ২০২০ সালে অতিমারির কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল।
এ বছর রিপাবলিক এবং ডেমোক্র্যাট, আমেরিকার এই দ্বিদলীয় আইনসভার সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে লালকেল্লার অনুষ্ঠানে। এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমেরিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কংগ্রেস সদস্য আর ও খন্না এবং মাইকেল ওয়ালজ়।