গাঁধীনগরের ব্যাঙ্কে এসে সাড়ে চার হাজার টাকার পুরনো নোট বদল করলেন একশো ছুঁইছুঁই হীরাবেন। প্রধানমন্ত্রীর মা। পেলেন নতুন দু’হাজার টাকার নোটও। ছবি: পিটিআই।
প্রায় একশোর কাছাকাছি বয়স হতে চলল। ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও নেই। তবু ছেলের ডাকে সাড়া দিয়ে কোনও রকমে এই বয়সেও সাড়ে চার হাজার টাকার নোট বদল করতে ব্যাঙ্কে এলেন হীরাবেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার পরে দেশের কোণায় কোণায় এমন হাজারো-লক্ষ প্রবীণ মানুষ রোজ ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা বদল করতে আসছেন। তা নিয়ে ভোগান্তিও কম নয়। কিন্তু হীরাবেন সে অর্থে সাধারণ কোনও ব্যক্তি নন। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর মা। তাই আজ গুজরাতের গাঁধীনগরে বাড়ির কাছে ব্যাঙ্কে নোট বদল করতে গিয়ে নজর কাড়লেন সকলের। আত্মীয়দের ভরসায় হুইলচেয়ার থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে টিপসই দিয়ে নোট বদল করলেন এই প্রবীণা।
বিরোধী দলগুলি যখন মানুষের ভোগান্তিকে বড় করে তুলে ধরতে তৎপর, সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর মা আমজনতার মতোই ব্যাঙ্কে গিয়ে নোট বদল করলেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনাকে বিজেপি ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে মনে করছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, হাতে নগদ তো খোদ প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও রয়েছে। নোট বাতিলের ঘোষণার পর দেশজুড়ে দিন ও রাতভর হন্যে হয়ে আমজনতাকে যখন ব্যাঙ্কের লাইনে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রীদের কাউকে কেন এখনও পর্যন্ত এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না? তাঁদের হাতে থাকা নগদ কী ভাবে নতুন নোটে বদল হচ্ছে?
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ফি-বছর নিজেদের সম্পত্তির খতিয়ান দিতে। এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেশ করা হিসেবে দেখা যাচ্ছে, খোদ প্রধানমন্ত্রীর হাতেই রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। নোট বদলের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর হলেও গোটা কর্মকাণ্ডটি এখন যাঁকে রোজ সামলাতে হচ্ছে, তিনি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর হাতে নগদ রয়েছে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা। তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতার হাতে আরও প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুর নিজের কাছে নগদ রয়েছে প্রায় ২৭ হাজার টাকা, কিন্তু স্ত্রীর হাতে দেড় লক্ষ টাকা। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে নগদ প্রায় তিন লক্ষ টাকা রয়েছে। তবে গত আট মাসে এই হিসেবের হেরফের অবশ্যই হবে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক সপ্তাহ হয়ে গেল, কোনও মন্ত্রীকে ব্যাঙ্কে লাইন দিয়ে এই ভোগান্তির শরিক হতে দেখা দেল না। অর্থমন্ত্রী একটি ব্যাঙ্কে এসেছিলেন, কিন্তু মূলত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। উল্টে রাহুল গাঁধী এক বার সাড়ে চার হাজার টাকা বদল করতে আসার পর খোদ প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য সাফাই দিচ্ছেন, প্রত্যেককে নিজের ব্যাঙ্কে এসে টাকা জমা দিতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অন্য কাউকে অধিকারপত্র লিখে দিলে অনায়াসে সে সেই টাকা জমা দিয়ে আসতে পারেন। বেশিরভাগ মন্ত্রী, আমলার ক্ষেত্রে তাঁদের ব্যক্তিগত সচিবরাই এই কাজটি করে থাকেন।
কিন্তু মন্ত্রীদের এই ‘ভিআইপি’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধেই এ বার মুখ খুলেছেন বিরোধীরা। রাহুল গাঁধী এ দিন মন্তব্য করেন, ‘‘টাকা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল যাঁরা, সেই বড় খেলোয়াড়দের লাইনে দেখা যাচ্ছে না।’’ তবে বাতিল টাকা বদলাতে মোদীর মায়ের ব্যাঙ্কে আসা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাহুল। শুধু বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী ও আমার কাজের পদ্ধতি আলাদা।’’ পরে এ নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের ব্যাখ্যা, মোদী আসলে নিজের মা-কে নিয়ে রাজনীতি করছেন। রাহুল এমন করেন না বলেই বোঝাতে চেয়েছেন। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলও মোদীকে নিশানা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি দুঃখিত যে প্রধানমন্ত্রীর ৯৭ বছর বয়সি মা-কেও ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। মায়ের প্রতি সন্তানের দরদ থাকলে এই ঘটনা ঘটে না। সে দিকে নজর না দিয়ে ওঁরা ৫৬ ইঞ্চি ছাতির দাবি করতেই ব্যস্ত!’’ কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন, ‘‘মোদী ‘কুমীরের কান্না’ শেষ করে কবে মানুষের সঙ্গে দাঁড়াবেন?’