চালু হল আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প।
ঘোষণা হয়েছিল ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল রবিবার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত’-কে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য প্রকল্প। রবিবার রাঁচিতে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিনামূল্যে পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাচ্ছে প্রায় সাড়ে দশ কোটি পরিবার। উপকৃত হবেন গরিব ও নিম্নবিত্তরা। কারা পাবেন সুবিধা, কীভাবে মিলবে, হাসপাতালে গিয়েই বা কী করতে হবে, জেনে নিন তার খুঁটিনাটি।
আয়ুষ্মানের সুবিধা
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সঙ্গেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ২০০৮ সালে চালু হওয়া ইউপিএ জমানার রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা। নতুন প্রকল্পে পরিবারের সব সদস্য মিলে বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা পাবেন। এর জন্য কোনও প্রিমিয়াম দিতে হবে না কোনও পরিবারকে। সরকারি ও নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে নথিপত্র ছাড়াই ‘ক্যাশলেস’ সুবিধা পাবেন প্রকল্পের আওতাভুক্তরা। নথিভুক্তিরও প্রয়োজন নেই। ২০১১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে স্বাভাবিক ভাবেই সুবিধা মিলবে। প্রমাণপত্র হিসাবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড থাকলেই হবে।
লক্ষ্য গরিব-বঞ্চিতরা
গ্রাম ও শহরের নিম্নবিত্ত মানুষকে পেশা, বাড়ির অবস্থা, আয়ের উৎস, ইত্যাদির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে, কারা এই প্রকল্পের আওতায় পড়বেন। এটা মূলত ২০১১ সালের সোশিও ইকনমিক কাস্ট সেনসাস (এসইসিসি) বা আর্থ-সামাজিক জনগণনার ভিত্তিতে করা হয়েছে। ওই সুমারি অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলের ৮.৩ কোটি এবং শহর এলাকার ২.৩৩ কোটি পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসতে চলেছেন। সদস্য সংখ্যার হিসাব ধরলে প্রায় ৫০ কোটি লোকই পাবেন আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা।
আওতায় সব সদস্যই
পরিবারের সদস্য সংখ্যার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থাৎ পরিবারের সদস্য সংখ্যা যা-ই হোক, তাতে আয়ুষ্মানের আওতায় আসতে কোনও সমস্যা হবে না। বয়সেরও কোনও সীমা নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব সদস্যই প্রকল্পের আওতায় আসবেন।
আরও পড়ুন: আয়ুষ্মানে ‘সিজারিয়ান’-এ টাকা, সংশয় অনেকেরই
সুবিধা পাবেন যাঁরা
গ্রামাঞ্চল: যাঁদের একটি মাত্র ঘর; কাঁচা বাড়ি, কাঁচা ছাদ; ১৬ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে কোনও সদস্য নেই এমন পরিবার; পরিবারের প্রধান যেখানে মহিলা এবং কোনও পুরুষ সদস্য নেই; প্রতিবন্ধী সদস্য থাকলে এবং সেই পরিবারে সুস্থ কোনও সাবালক সদস্য না থাকলে; তফসিলি জাতি ও উপজাতি পরিবার; নিজস্ব জমি নেই; যাঁদের আয় মূলত অস্থায়ী শ্রমিক হিসাবে কায়িক শ্রম।
এছাড়া গৃহহীন, সহায়-সম্বলহীন, ভিক্ষাজীবী, কাগজকুড়ানি, প্রাচীন জনগোষ্ঠী এবং আইনগত ভাবে ঘোষিত চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক পরিবারগুলি স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন।
শহরাঞ্চল: বিভিন্ন পেশার মোট ১১টি শ্রেণির কর্মী তথা পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন ভিক্ষাজীবী, পুরনো জামাকাপড়ের কারবারী, পরিচারক-পরিচারিকা, হকার, চর্মকার, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, নানা রকম ছোট খাটো পরিষেবা দাতারা, নির্মাণ শ্রমিক, কল-মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, রঙ-মিস্ত্রি, ওয়েল্ডার, মালি, বাড়ির যে কোনও কাজের লোক, নিরাপত্তা রক্ষী, কুলি ও মোটবাহক, ঝাড়ুদার, সাফাইকর্মী, হস্ত ও কুটির শিল্পের কর্মী, পরিবহণ শ্রমিক, চালক, কন্ডাক্টর, খালাসি, রিকশা ও ঠেলাচালক, দোকানের কর্মী বা সহায়ক, ছোট সংস্থার পিয়ন, হেল্পার, সরবরাহকারী, ধোপা, চৌকিদার, পেনশনভোগী, ভাড়ার উপর নির্ভরশীল ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: শ্বশুরকে গাছে বেঁধে বউমাকে নগ্ন করে মারধর, যৌনাঙ্গে লঙ্কার গুঁড়ো, তোলপাড় অসম
হাসপাতালে ভর্তি হলে
এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত রোগীদের সাহায্যের জন্য সরকারি হাসপাতালে এবং নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতালে একজন আয়ুষ্মান মিত্র থাকবেন। এই রোগীদের প্রমাণপত্র নেওয়া থেকে যাচাই করা, সবই এই আয়ুষ্মান মিত্ররাই করবেন। সরকার নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে অন্তত ১০টি শয্যা এই প্রকল্পের রোগীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। সারা দেশের যে কোনও প্রান্তেই এই বিমার সুবিধা মিলবে। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তির আগে ওই সংক্রান্ত অসুস্থতায় আগের এবং পরের খরচও দেওয়া হবে।
হেল্পলাইন ও তথ্য
স্বাস্থ্যবিমার এই প্রকল্পের জন্য হেল্পলাইন নম্বর ১৪৫৫৫ চালু হয়েছে। এখানে ফোন করে যাবতীয় তথ্য মিলবে। এছাড়া www. abnhpm.gov.in এই ওয়েবসাইট থেকে আওতাভুক্ত পরিবারের তথ্য মিলবে। অর্থাৎ কোনও পরিবার আয়ুষ্মান ভারতের আওতাভুক্ত কিনা, তা এখান থেকে তথ্য ডাউনলোড করে জানা যাবে।