নবরাত্রির সময় প্রতি বছরই নরেন্দ্র মোদী নিয়ম করে উপবাস করেন। গত চল্লিশ বছর ধরে এটাই নিয়ম।
সেই নরেন্দ্র মোদীকেই এ বার পরামর্শ, তিনি ‘উপবাস দিবস’-এর কথা ঘোষণা করুন। যে দিন গোটা দেশের মানুষ উপবাস করবে। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকেই এই ঘোষণা করে দেওয়ার অনুরোধ পৌঁছেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে।
এ বার স্বাধীনতা দিবসের আগে মোদী আমজনতার থেকে পরামর্শ চেয়ে পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, দেশের মানুষই তাঁকে বলুন, স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় তিনি কী কী বিষয়, নতুন চিন্তাভাবনা তুলে ধরতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকারের মাইগভ পোর্টালের মাধ্যমে নতুন ভাবনা বা পরামর্শ পাঠানোর জানলাও খুলে দেওয়া হয়েছে। তার পরেই নানা রকমের বিচিত্র পরামর্শ এসে জড়ো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যার সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে।
কেউ চাইছেন, কাশ্মীরের সমস্যা, উন্নয়নের অভাব নিয়ে মোদী তাঁর মত জানান। পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিন। কেউ আবার চান, প্রধানমন্ত্রী অলিম্পিকে দেশের ক্রীড়াবিদদের ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুলুন। অনুরোধের আসরে রয়েছে পথ দুর্ঘটনার সমস্যাও। কিন্তু তার সঙ্গে এমন বিচিত্র সব পরামর্শ এসেছে, যা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কর্তাদেরও ভাবিয়ে তুলেছে।
অমিয় অর্ণব যেমন। প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর অনুরোধ, ‘প্রতি মাসেই তো কোনও না কোনও দিন উদযাপন করা হয়। এমন একটা দিন কি বেছে নেওয়া যায়, যে দিন সারা দেশ উপবাস করবে!’ প্রধানমন্ত্রী নিজে নবরাত্রিতে উপবাস করেন। দু’বছর আগে নবরাত্রি চলাকালীনই মার্কিন সফরে গিয়েছিলেন মোদী। কর্মসূচিতে প্রাতরাশ বৈঠক, নৈশভোজের আমন্ত্রণ সবই ছিল। কিন্তু মোদী নিজে লেবুর সরবত ছাড়া কিছুই মুখে তোলেননি। তাঁর কাছে এমন উপদেশ তাই হেসে উড়ে দেওয়ার মতো নয়। মিথিলেশ চৌসকে আবার চান, বিহারের ধাঁচে দেশ জুড়ে মদ ও সব রকম নেশার পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিন মোদী।
শিবম শ্রীবাস্তবের উপদেশ, প্রতি সপ্তাহে একটা দিন ঘোষণা করা হোক, যে দিন গোটা পাড়া বা মহল্লার মানুষ সেখানকার রাস্তাঘাট সাফ করবেন। তা হলেই প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারে। পি জানকীরাম চান, চাষে রাসায়নিক সার বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ ভারতের ধাঁচে সুস্থ ভারত প্রকল্প ঘোষণা করুন।
এই নিয়ে তৃতীয় বার লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা দিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। লালকেল্লার প্রথম বক্তৃতা থেকেই তিনি নেহরু জমানার যোজনা কমিশন ভেঙে দেওয়ার বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কংগ্রেসের ‘স্যুট-বুট কি সরকার’-এর জবাবে গত বছরের বক্তৃতা জুড়েই ছিল গরিব, কৃষকদের কথা। এ বার স্বাধীনতা দিবসের অনেক আগে থেকেই মোদী সরকারের গায়ে ‘দলিত বিরোধী’ তকমা এঁটে দিতে চাইছেন বিরোধীরা। মোদী নিজেও দলিতদের উপর নির্যাতন, জাতপাত নিয়ে মুখ খুলেছেন। মুরলীকৃষ্ণ রেড্ডির পরামর্শ, প্রধানমন্ত্রী যেমন সবাইকে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন, একই ভাবে তিনি পদবি ছেড়ে দেওয়ারও আবেদন জানান। অন্তত সহজে পদবি বদলে ফেলার ব্যবস্থা করুক কেন্দ্র। পদবি না থাকলে জাতপাতের ভেদাভেদও থাকবে না।
রাজনীতির ফায়দা তুলতে রাহুল গাঁধী থেকে অমিত শাহরা গরিব, দলিত মানুষের বাড়িতে থেকেছেন। দিব্যেশ ঠক্করের পরামর্শ, দেশের এমন হাজার হাজার মানুষ রয়েছেন, যাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় আয় অনেক বেশি। তাঁরা প্রতি মাসে কোনও এক দিন এক জন গরিব মানুষের বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারেন। তাঁদের অভাব, সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারেন। দিব্যেশ চান, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উৎসাহ দিন।
রোজকার সমস্যা নিয়েও আবেদন এসেছে মোদীর কাছে। যেমন বিপ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তিনি মেয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু পত্রিকার গ্রাহক হয়েছেন। ডাকঘরের পোস্টম্যানরা সে সব চুরি করে নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীই লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে এর বিচার করুন! এত পরামর্শের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কোনওটা গ্রহণ করেন কিনা, সোমবার লালকেল্লায় তা জানা যাবে।