৪ প্রজন্ম সেনায়, ‘দেশহীন’ হয়ে ফেরাবেন পদক! 

তেজপুরের অবিনাশচন্দ্র দেব ১৯৭০ সালের মে মাসে বায়ুসেনার যোগ দেন। সংগ্রাম পদক-সহ তিনটি পদক পেয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০১
Share:

এনআরসি পূনর্মূল্যায়নের দাবি ফের তুলবে রাজ্য সরকার। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

অসমের মন্ত্রী ভরসা দিচ্ছেন, যত ক্ষণ নরেন্দ্র মোদী আছেন, অমিত শাহ আছেন, তত ক্ষণ হিন্দুদের দেশহীন হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু দেশের সেবা করেও ‘দেশহীন’ হয়ে পড়া বাঙালি, নেপালি পরিবারগুলি কারও নামেই আস্থা রাখতে পারছে না। চার প্রজন্ম ধরে সেনাবাহিনীতে থাকার পরেও এনআরসি-ছুট হিসেবে জুটেছে দেশহীনের তকমা। সামরিক পদক ফেরানোর কথা ভাবছেন তাঁরা। স্বজনের বলিদানের বিনিমিয়ে পাওয়া জাতীয় শহিদের স্মারক নিয়েই বা কী করবেন বুঝছেন না অনেকে।

Advertisement

তেজপুরের অবিনাশচন্দ্র দেব ১৯৭০ সালের মে মাসে বায়ুসেনার যোগ দেন। সংগ্রাম পদক-সহ তিনটি পদক পেয়েছেন তিনি। তাঁর বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার নথিই যথেষ্ট ভেবে নিয়ে ছেলে অজয় দেব লেগ্যাসি জমা দেন। কিন্তু প্রথম তালিকায় নাম আসেনি মরাভারলির বাসিন্দা দেব পরিবারের। ছোট মেয়ে অঞ্জনাদেবীর স্বামী বিপ্লব দাস বলেন, পরিচিতির সূত্র ধরে এনআরসির এক কর্মীর কাছে জানতে পারি, আমার স্ত্রীর বার্থ সার্টিফিকেটে সিলমোহর স্পষ্ট নয় বলে নাম বাদ পড়েছে। ফের সব নথি, পেনশনের কাগজ দেওয়ার পরেও অবিনাশবাবুর তিন ছেলেমেয়ে এবং অজয় ও অনিতার ছেলেমেয়েদের নাম তালিকায় ওঠেনি। অবিনাশবাবুর বাড়িতে ঝুলতে থাকা গর্বের তিনটি পদক এখন ছেলেমেয়েদের কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে।

একই ভাবে যোরহাটের চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর। তাঁর পরিবারেরও নাম নেই এনআরসিতে। অসম আন্দোলনে মারা যাওয়া ‘জাতীয় শহিদ’ মদন মল্লিকের নাম ডি-ভোটার তালিকায় ঢোকানোয় তাঁর পরিবার যেমন খসড়াছুট, তেমনই, ছয়গাঁওয়ের ঢেকেনাবড়ির বাসিন্দা আর এক ‘জাতীয় শহিদ’ মৃণল ভৌমিকের পরিবারের ৬ জনের নামও এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে! সরকারি স্মারক, ৫ লক্ষ টাকা পাওয়া পরিবারটি বুঝতেই পারছে না কেন বিদেশিমুক্ত অসম গড়তে প্রাণ দেওয়া জাতীয় শহিদের নামও তালিকা থেকে বাদ!

Advertisement

ধেমাজির শিলাপথারের বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত জওয়ান দলবাহাদুরের লজ্জা আরও বেশি। কারণ তাঁর বাবা-মা থেকে নাতি-নাতজামাইয়ের নিয়ে পরিবারের মোট ১৩ জন সামরিক বাহিনীতে আছেন বা ছিলেন। কিন্তু তার পরেও তাঁর নিজের ও অনেকেরই নাম এনআরসিতে নেই। বাবা শ্বেত বাহাদুর কামি ছিলেন ব্রিটিশ জমানার সেনাবাহিনীতে। কিন্তু গোমাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তিনি ১৯৪০-এর দশকে চাকরি খোয়ান। দেশ স্বাধীন হলে ফের কাজে যোগ দেন শ্বেতবাহাদুর। তাঁর স্ত্রী ভুবেশ্বরী কামি ছিলেন সেনাবাহিনীর নার্স। শ্বেতবাহাদুরের পাঁচ ছেলে ও পাঁচ জামাই সেনাকর্মী! দুই নাতি ও এক নাতজামাইও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। কিন্তু এমন পরিবারের সিংহভাগ সদস্যের নাম না-আসায় ধেমাজিবাসী বিস্মিত। পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের দেওয়া সব পদক ফেরত দেবেন। শিলাপথার নগরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জ্যোতিষ দাসের ছেলে, গবেষক উত্তম দাস, স্ত্রী মিনতি দাস ও তাঁদের পরিবারের ১১ জনের নাম এনআরসিতে খারিজ হয়েছে।

রাজ্যের পূর্ত স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা অবশ্য অভয় দিয়ে বলেন, এই তালিকায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ আছেন। সব বিদেশির নাম বাদ ও ভারতীয়দের নাম না-ঢোকা পর্যন্ত তালিকা চূড়ান্ত নয়। তিনি এ-ও জানান, তালিকায় বিস্তর ভুলের তথ্য সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরে এনআরসি পূনর্মূল্যায়নের দাবি ফের তুলবে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে তিনি আসু, অসম পাবলিক ওয়ার্কস ও অন্য সব সংগঠনকে হাত মেলানোর ডাক দেন। বলেন, “সকলে মিলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে, আমার বিশ্বাস, আদালত এই এনআরসির উপরে স্থগিতাদেশ দেবে। ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর অমিত শাহ উত্তর-পূর্ব পরিষদের বৈঠকে আসছেন। তখন এ নিয়ে বিশদে আলোচনা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement