প্রতীকী ছবি।
প্রায় তিন দশক নিজের গ্রামের সঙ্গে সরাসরি যোগ নেই তার। গ্রামের বহু লোকই স্রেফ নামে চেনে তাকে। তাই গত কাল মহম্মদ ইউসুফ শাহ ওরফে সৈয়দ সালাউদ্দিনকে খোদ আমেরিকা ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’র তকমা দিলেও তাতে বিশেষ হেলদোল নেই বাদগাম জেলার সোইবাগ গ্রামের বাসিন্দাদের।
হেলদোল না থাকার ‘কারণ’ও হয়তো আছে। সেটা সরাসরি না বললেও স্থানীয়দের একাংশের আচরণেই স্পষ্ট। তাঁদের মতে, সৈয়দ সালাউদ্দিনের পরিবারের মতো জীবন এখন অনেক কাশ্মীরির স্বপ্নের অতীত। সালাউদ্দিনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সৈয়দ শাকিল আহমেদ শ্রীনগরের ‘শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর উচ্চপদস্থ কর্মী। এক ছেলে ওয়াহিদ ইউসুফ ওই হাসপাতালেরই চিকিৎসক। বাকি ছেলেরা রাজ্য সরকারের নানা দফতরে রয়েছেন। মেয়ে নাসিমা বাদগামের ধারমুনায় সরকারি স্কুলের শিক্ষক। অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের কাশ্মীর সংক্রান্ত উপদেষ্টা এ এস দুলাত তাঁর স্মৃতিকথায় দাবি করেছেন, সালাউদ্দিনের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল কেন্দ্র। তাই ওয়াহিদ ইউসুফের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির বিষয়ে কেন্দ্র সক্রিয় হয়েছিল। জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে ‘ট্র্যাক-টু’ আলোচনা চালাতে এমন উপায় নেওয়ার অভিযোগ অনেক বারই উঠেছে।
সোইবাগে সালাউদ্দিনের বাড়ির কাছে থাকেন শিক্ষক ইরশাদ। আমেরিকা তাঁর প্রতিবেশীকে ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’র তকমা দিয়েছে শুনে বললেন, ‘‘এ সব অনেক বড় খেলা!’’ আর এক প্রতিবেশী, পিএইচডি-পড়ুয়া হাফিজের কথায়, ‘‘প্রায় ৩০ বছর ঘরছাড়া হয়ে উনি জঙ্গিদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ওঁর আর এই তকমায় কী হবে?’’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘১৯৮৭ সালের নির্বাচনে রিগিং না হলে ছবিটা অন্য রকম হতো। ভারত সরকার তখনই বীজ পুঁতেছিল। এখন ফল ভুগছে!’’
আজকের ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’ সালাউদ্দিন ১৯৮৭ সালের ভোটে আমিরাকাদাল কেন্দ্র থেকে মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। কিন্তু ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রার্থী গুলাম মইনুদ্দিন শাহের কাছে হেরে যান। ওই নির্বাচনে সরকারি মদতে ফারুক আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স ব্যাপক রিগিং করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
ভোটে হেরে গোলমাল পাকান তৎকালীন ছাত্র নেতা সালাউদ্দিন, ইয়াসিন মালিকরা। তাঁদের বিনা বিচারে মাসের পর মাস জেলে আটকে রাখা হয়। মুক্তি পেয়েই জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। এখন পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদে বসেই হিজবুল এবং জঙ্গিদের যৌথ মঞ্চ ‘ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিল’-কে নিয়ন্ত্রণ করেন সালাউদ্দিন। জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার পরেই ওই ছদ্মনাম নিয়েছিলেন মহম্মদ ইউসুফ শাহ। আর ইয়াসিন মালিক বিচ্ছিন্নতাবাদী জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা।
সালাউদ্দিনকে জঙ্গি তকমা দেওয়ার বিরুদ্ধে আজ সরব হয়েছে পাকিস্তান। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মতে, কাশ্মীরিদের ‘সংগ্রামে’ যুক্ত ব্যক্তিদের জঙ্গি তকমা দেওয়া একেবারেই অন্যায্য। পাকিস্তান কাশ্মীরিদের পাশেই আছে।
ভারত অবশ্য মনে করছে, আমেরিকা সালাউদ্দিনকে ‘আন্তর্জাতিক জঙ্গি’র তকমা দেওয়ায় হিজবুলের অর্থ জোগানে ভাটা পড়বে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মেহর্ষি ও বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের মতে, নির্দিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিশানা করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এতে ওই গোষ্ঠী কোণঠাসা হবে।