তিনি নিজেই একটা ব্র্যান্ড।
এবং ব্যক্তিগত সেই ব্র্যান্ডকে কাজে লাগিয়ে বাজার ধরার প্রতিযোগিতাতেও খুব একটা পিছিয়ে থাকতে দেখা যায়নি রামদেবকে। বছর দশেক আগে আয়ুর্বেদিক ওষুধপত্র নিয়ে তাঁর ‘পতঞ্জলি’ যখন প্রথম বাজারে আসে তখন সেই ব্র্যান্ডকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। এখন সেই ‘পতঞ্জলি’রই প্রায় ৫০০ রকমের পণ্য। কী নেই সেই তালিকায়! পেস্ট থেকে শুরু করে শ্যাম্পু, বিস্কুট থেকে নুডল্স, ফেস ওয়াশ থেকে ফ্রুট জুস— সব। পণ্য তালিকার এমন অফুরন্ত ভাণ্ডার দেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় মজা করে বিভিন্ন সময়ে তা নিয়ে চর্চাও হয়েছে। এখনও হয়। যেমন ক্যাকটাসে মোড়া ‘সোফা’র ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে এটা আয়ুর্বেদিক সোফা। হাসি, লাইক ও শেয়ারের বন্যা বয়ে গিয়েছে। আবার শাকসব্জি দিয়ে তৈরি জামা-কাপড়ের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে ‘পতঞ্জলি পোশাক’। হাসির ছররা উঠেছে এমন অসংখ্য উদাহরণ দেখে।
কিন্তু, সেই অবাস্তবকে এ বার বাস্তবের চেহারা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন খোদ রামদেব। জানিয়ে দিলেন, তাঁর সংস্থা এ বছরের শেষেই বাজারে আনছে ‘স্বদেশি জিনস্’। তবে সেই জিনস্ মোটেও শাক-লতা-পাতায় তৈরি নয়। জিনস্-এর বিদেশি ব্র্যান্ডগুলিকে এ দেশের বাজারে তো বটেই ভিনদেশেও ধরাশায়ী করতে রামদেবের এই উদ্যোগ। তাঁর মতে, এ দেশের যুবসমাজের কাছে ডেনিম জাতীয় জিনস্-এর ব্যাপক চাহিদা। সেই চাহিদা মেটাতেই স্বদেশি জিনস্ বাজারে আনবে পতঞ্জলি। এবং জিনস্-এর হাত ধরেই পোশাক ব্যবসায় ঢুকে পড়তে চায় তারা। পরে অন্যান্য পোশাকের কথাও তাঁদের মাথায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: পতঞ্জলির সিইও আচার্য বালকৃষ্ণ দেশের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম
ভারতীয় যোগকে আম আদমির দরবারে বিপুল জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে তাঁর ভূমিকা খুব একটা কম নয়। এক মুখ লম্বা দাড়ি-গোঁফ। চুলের ঝুল বেশ খানিকটা লম্বা। পাতলা চেহারার পরনে শুধুই গেরুয়া রঙের স্বল্পাবাস। যোগের নানা পদ্ধতি আম-দরবারে প্রদর্শনের সময় তাঁর কসরত্ দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হন। সেই স্বল্পাবাস রামদেবের মাথাতেও কি না জিনস্-এর ভাবনা! অবাক হয়েছেন অনেকেই।
তবে, জিনস্-এর ‘স্বদেশি’করণ নিয়ে আপত্তিও রয়েছে একটা অংশের মধ্যে। তাঁদের মতে, পশ্চিমি দেশগুলিতে ডেনিম কাপড়ের পোশাক পরতেন মূলত খনিশ্রমিক বা কৃষকেরা। খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকের সময় থেকেই তার শুরু। পরে বাইক আরোহীদের মধ্যেও এর চল বাড়ে। ডেনিম কাপড়ের শিকড় ইতালিতে থাকলেও পরে আমেরিকাতেও এই কাপড়ের ব্যবহার শুরু হয়। এ দেশে গত শতাব্দীতে মূলত তৈরি হতে শুরু করে ডেনিম কাপড়ের পোশাক। কিন্তু, বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডেরই প্রভাব বেশি ছিল। এখনও তাই আছে। কাজেই একটা বিদেশি পণ্যের নামে কী ভাবে ‘স্বদেশি’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া যায়? প্রশ্ন উঠছে।