জল ঠেলে এ ভাবেই ঘরে ফিরতে হল মুম্বইকরদের। ছবি: এএফপি।
সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। দুপুরের মধ্যেই গোটা বাণিজ্য নগরী প্রায় ডুবতে বসে! চার দিকে জল আর জল। সঙ্গে টানা প্রবল বৃষ্টি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, মুম্বই প্রশাসনের তরফে নাগরিকদের খুব প্রয়োজন না থাকলে বাইরে বেরোতে বারণ করা হয়েছে। ডাকা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও।
এই সময়টায় মুম্বইতে গড় যে বৃষ্টি হয়, মঙ্গলবার সকালে যেন তার বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। আবহাওয়া দফতরের একটা হিসাব বলছে, তিন ঘণ্টায় গড়ের চেয়ে প্রায় ন’গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে ভেসে গিয়েছে গোটা শহর। চতুর্দিক জল থই থই করছে। কোথাও সেই জল কোমর ছাড়িয়েছে, তো কোথাও বুক। চার দিক অন্ধকার করে সকাল থেকেই ঝেঁপে নেমেছে, আর থামেনি। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় প্রবল থেকে প্রবলতর বৃষ্টি হবে। ১২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যেতে বসেছে যে শহর, আগামী দু’দিন টানা বৃষ্টি হলে তার কী হাল হবে! চিন্তায় পড়েছে ফডণবীস প্রশাসন।
২০০৫-এর পর থেকে এমন বৃষ্টি দেখেনি মুম্বই। সে বারের বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল শহর। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। প্রায় ৫০০ জন মারাও গিয়েছিলেন। শহর স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগেছিল। এ বারও কি সে রকম পরিস্থিতি হবে? নাগরিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তার মধ্যে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, খুব প্রয়োজন না থাকলে বাড়ি থেকে যেন কেউ না বেরোয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যে কোনও রকমের সাহায্যের জন্য ১০০ ডায়াল করতে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস মুম্বই পুলিশের সদর দফতরে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। দফতরের জায়ান্ট স্ক্রিনে শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটেজ তিনি দেখেন।
আরও পড়ুন
রাম রহিমের সাজা ঘোষণার সময় কী বললেন বিচারক?
জমা জলে আটকে পড়ল বাস। ছবি: এএফপি।
এ দিন সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় ট্রেন লাইনে জল জমে যায়। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে লোকাল ট্রেনগুলি। ট্রেনের পাশাপাশি বাস পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা রীতিমতো টলে যায়। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি উড়ানও বাতিল করা হয়েছে। সমুদ্রের জলও বাড়ছে বলে প্রশাসনের তরফে সৈকতে যেতে বারণ করা হয়েছে। সতর্কও করা হয়েছে পাড় লাগোয়া বাসিন্দাদের। স্কুল থেকে পড়ুয়াদের তাড়াতাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন অফিসের কর্মীদের তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামিকাল মুম্বইয়ের সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।
আরও পড়ুন
৩৭ লক্ষ টাকা পাল্টে দিল সেই দানা মাঝিকে!
জলের তলায় ডুবেছে রাস্তা। ছবি: সংগৃহীত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে মুম্বইবাসীকে সাবধানে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসকে ফোন করে রাজ্যের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন। বৃহন্মুম্বই পুরসভা এই মুহূর্তে আদিত্য ঠাকরের শিবসেনার দখলে। তিনিও সকলকে বাড়ি থেকে না বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন। শহরে জল জমার কারণ হিসাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিকে দায়ী করলেও নাগরিকদের একাংশ পুরসভার বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। নিকাশি ব্যবস্থা শিকেয় ওঠার ফলেই জল বেশ কিছু জায়গায় জল জমেছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
আরও পড়ুন
ডিভাইন শব্দটি রাম রহিমদের মাথায় থাকে না
গণেশ চতুর্থী শেষে এই সময়টায় মুম্বইয়ে বিসর্জনের পালা চলছে। প্রশাসনের তরফে বিসর্জন তো দূর অস্ত্, সমুদ্রের ধারে যেতেই বারণ করে দেওয়া হয়েছে। শহর জুড়ে বিদ্যুত্ বিপর্যয় চলছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বান্দ্রা থেকে ওরলি সি লিঙ্কও। জল জমে গিয়েছে কিঙ্গ মেমোরিয়াল এডওয়ার্ড হাসপাতালে। সেখানকার শিশুদের বিভাগটি খালি করে দেওয়া হয়েছে।
দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই মুম্বইকরদের। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন তা বেড়েই চলেছে।
দেখুন ভিডিও