অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে তাঁর স্বামী পরকলা প্রভাকরই কটাক্ষ করলেন।
বিরোধীরা কটাক্ষ করছিলেন। এ বার অর্থনীতির দুর্দশার দায় ভগবানের ঘাড়ে চাপানোর জন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে তাঁর স্বামীই কটাক্ষ করলেন।
নির্মলা বলেছিলেন, কোভিড দৈবদুর্বিপাক বা ভগবানের মার। তার জেরেই অর্থনীতির সঙ্কোচন। কার্যত স্ত্রী-র মন্তব্যকেই কটাক্ষ করে আজ নির্মলার স্বামী, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের প্রাক্তন জনসংযোগ উপদেষ্টা ও পেশাদার অর্থনীতিবিদ পরকলা প্রভাকরের মন্তব্য, “আসল দৈবদুর্বিপাক হল, দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সরকারের মধ্যে সুসংহত ভাবনাচিন্তার অভাব।”
গত অক্টোবরে প্রভাকর অভিযোগ করেছিলেন, অর্থনীতিতে ঝিমুনি ধরলেও সরকার তা অস্বীকার করছে। এ দিন বোধহয় নিজের স্ত্রী-র কাছেই প্রভাকরের প্রার্থনা, “ভগবানের দোহাই, এ বার তো কিছু করুন!’’
২৭ অগস্ট
‘‘কোভিডের ফলে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি
তৈরি হয়েছে। এটা দৈবদুর্বিপাক বা ভগবানের মার— যার ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কোচনও হতে পারে।’’—অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন
৩ সেপ্টেম্বর
‘‘আসল ‘দৈবদুর্বিপাক’ হল, দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সরকারের সুসংহত ভাবনাচিন্তার অভাব। কোভিড তো দেরিতে এসেছে। আমি ২০১৯-এর অক্টোবরেই বলেছিলাম যে সরকার (অর্থনীতির ঝিমুনি) অস্বীকার করছে। জিডিপি-র ২৩.৯ শতাংশ সঙ্কোচনে সেটা ঠিক প্রমাণিত হল। ভগবানের দোহাই, এ বার তো অন্তত কিছু করুন!’’ —পরকলা প্রভাকর, অর্থনীতিবিদ, নির্মলার স্বামী
অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস, এপ্রিল-জুনে জিডিপি-র ২৩.৯ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছে। প্রথমে না-মানলেও আজ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক মাসিক রিপোর্টে স্বীকার করেছে, এপ্রিল-জুনে ভারতের জিডিপি-র সঙ্কোচনের মাত্রা অন্য বড় মাপের অর্থনীতির সঙ্কোচনের তুলনায় বেশি। কড়া লকডাউনের ফলেই জিডিপি এত কমেছে। নির্মলা আগেভাগেই বলে রেখেছিলেন, কোভিড ঈশ্বরের মার। এর ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কোচনও হতে পারে। বাস্তবে তা-ই হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, লকডাউনের অনেক আগে থেকেই অর্থনীতিতে ঝিমুনি চলছে। তার পিছনে প্রধান কারণ, প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিল ও ত্রুটিপূর্ণ জিএসটি-র মতো ভুল নীতি।
আরও পড়ুন: রাজ্যের আর্জি খারিজ, বন্ধ হচ্ছে না জেইই-নিট
আরও পড়ুন: চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক রাজনাথের, লাদাখে চিন সেনা বাড়াচ্ছে, ভারতও
আজ বিরোধীদের সুরেই নির্মলার স্বামী বলেছেন, সব দোষ কোভিডের ঘাড়ে চাপালে চলবে না। তা এসেছে অনেক পরে। তার আগে থেকেই অর্থনীতির ঝিমুনি চলছে। কিন্তু তার মোকাবিলা না-করে সরকার বাস্তবকে অস্বীকার করে চলেছে।
গত অক্টোবরেও প্রভাকর নিবন্ধ লিখে অভিযোগ তুলেছিলেন, সরকার অর্থনীতির বাস্তব সমস্যা অস্বীকার করছে। পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, একের পর এক ক্ষেত্র কী ভাবে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। কিন্তু সরকার নতুন নীতি তৈরির আগ্রহই দেখায়নি। আজ তিনি বলেছেন, “আমি ২০১৯-এর অক্টোবরেই বলেছিলাম যে সরকার বাস্তব অস্বীকার করছে। জিডিপি-র ২৩.৯ শতাংশ সঙ্কোচনে সেটা ঠিক প্রমাণিত হল।”
বিজেপির ব্যাখ্যা, রাজনৈতিক মতাদর্শের নিরিখে নির্মলা ও প্রভাকর বরাবরই উল্টো সারিতে। স্ত্রী যখন বিজেপিতে যোগ দেন, তখন তার বিরোধী দলের সমর্থক তিনি। এ ভাবে অস্বস্তি ঢাকার চেষ্টা হলেও বিরোধীদের প্রশ্ন রোখা যাচ্ছে না।
রাহুল গাঁধী আজ ফের অগস্ট মাসে দেশে বেকারত্বের হার ৮.৪ শতাংশে পৌঁছে যাওয়া নিয়ে মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “১২ কোটি রোজগারের প্রতিশ্রুতি গায়েব। ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি গায়েব। আমজনতার আয় গায়েব। প্রশ্ন করলে উত্তর গায়েব।” কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, আইএলও-র রিপোর্ট অনুযায়ী ৪০ কোটি ভারতীয় দারিদ্র সীমার নীচে চলে যাচ্ছেন। এ দিকে ২ লক্ষ ১৪ হাজার সরকারি শূন্য পদে ২ কোটি ৯০ লক্ষ আবেদন এসেছে। কিন্তু ২-৩ বছরে তার ফল প্রকাশ হয়নি।
অর্থ মন্ত্রক অবশ্য মাসিক রিপোর্টে দাবি করেছে, অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ট্রাক্টর, সার, ইস্পাত বিক্রি থেকে সিমেন্ট উৎপাদন, বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধি দেখিয়ে তাদের দাবি, জুলাই-সেপ্টেম্বরে হাল ফিরছে। অর্থনীতির পুনর্গঠনে নতুন নীতি তৈরি করতে হবে বলেও অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে।