Al Qaeda

Al-Qaeda: নেপথ্যে আইএসআই? আল কায়দার বিশ্বব্যাপী জেহাদের তালিকায় ঢুকল কাশ্মীর, বাদ শিনজিয়াং

কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির পিছনে আইএসআই-এর (যারা এখন পিছন থেকে কেবল আল কায়দাই নয়, তালিবানকেও চালাচ্ছে) হাত দেখছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করাই যে তাদের পাখির চোখ, আল কায়দার ঘোষণায় তা আরও এক বার স্পষ্ট করে দিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই— এমনই মনে করছেন ভারতের গোয়েন্দারা।

Advertisement

আফগানিস্তানের সাফল্যের পুনরাবৃত্তিতে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের ডাক দিয়ে এক দিকে সোমালিয়া-ইয়েমেন, চেচনিয়া থেকে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশকে ‘ইসলামের শত্রুদের’ হাত থেকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছিল আল কায়দা। আফগানিস্তান থেকে গত ৩১ অগস্ট আমেরিকা শেষ সেনা ফিরিয়ে নিতেই ওই বিবৃতি দেয় ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন। যদিও কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেই বিবৃতি প্রত্যাহার করা হয়। পরিবর্তে নতুন বিবৃতি আসে, যাতে বিশ্বব্যাপী জেহাদের তালিকা থেকে বাদ পড়ে চেচনিয়া ও শিনজিয়াং। অন্তর্ভুক্ত হয় কাশ্মীর। বিবৃতিতে তড়িঘড়ি পরিবর্তন ও কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির পিছনে আইএসআই-এর (যারা এখন পিছন থেকে কেবল আল কায়দাই নয়, তালিবানকেও চালাচ্ছে) হাত দেখছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। সূত্রের মতে, চেচনিয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে শিনজিয়াং-এ চিনের সঙ্গে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে লড়াই যে তাদের আশু লক্ষ্যের মধ্যে নেই, তা বিবৃতি থেকে ওই এলাকাগুলির নাম প্রত্যাহার থেকেই স্পষ্ট। পরিবর্তে কাশ্মীরের নাম জোড়ার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে আইএসআই-আল কায়দার পরের নিশানা কাশ্মীরকে ভারত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া।

তালিবান প্রকাশ্যে কাশ্মীর নিয়ে আগ্রহ না দেখালেও আল কায়দা যে ভাবে কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিক জেহাদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তাঁদের আইএসআইয়ের সক্রিয় মদতে ফের নতুন করে কাশ্মীরকে অশান্ত করে তোলার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে কাশ্মীরের যুবকদের একাংশ নতুন করে সশস্ত্র জঙ্গি কার্যকলাপে উৎসাহ দেখাতে শুরু করেছে। নতুন করে সক্রিয়তা দেখা দিয়েছে পাক অধ্যুষিত কাশ্মীরের ‘লঞ্চ প্যাড’গুলিতে। স্বরাষ্ট্র সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে অন্তত তিনশো জঙ্গি বিভিন্ন লঞ্চ প্যাডে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। উপত্যকায় নতুন করে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য দুশ্চিন্তার হল গত এক মাসে দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে অন্তত ৪০ জন কাশ্মীরি যুবক চাকরির খোঁজে বেরিয়ে ঘরে ফেরেননি। এঁদের অধিকাংশ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

এই আবহে আল কায়দার ওই বিবৃতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাসের প্রশ্নে লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদ— ওই দুই গোষ্ঠী মূলত নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এত দিন মাথাব্যথা ছিল। এদের সঙ্গে আধুনিক অস্ত্রে তথা পাক বাহিনীর হাতে প্রশিক্ষিত আল কায়দা যদি কাশ্মীরে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে নব্বইয়ের দশকের মতো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে উপত্যকা। আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলকারী তালিবরা কাশ্মীরকে ভারতে ও পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা বলে অভিহিত করলেও, সে দেশের মাটি দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়ে এসেছে। অতীতে জইশ-ই মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহার আফগানিস্তানের খোস্ত-এ জঙ্গি শিবির চালিয়ে এসেছে। এ ছাড়া হরকত-উল-আনসার (পরে যারা হরকত-উল-মুজাহিদিনের সঙ্গে মিশে যায়), হরকত-উল-জিহাদ-আল-ইসলামির মতো সংগঠন আফগানিস্তানের জমি ব্যবহার করে এসেছে। এদের মদত দিয়ে এসেছে আইএসআই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের পরে কাশ্মীরে যে শান্তি ফিরে এসেছে, তা আদৌ পছন্দ নয় আইএসআইয়ের। তারা কাশ্মীরকে ফের অশান্ত করার ছক কষছে। আফগানিস্তানের পট পরিববর্তন তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। আমেরিকান সেনা ফিরে যাওয়ায় আফগানিস্তান ফ্রন্টে কর্মহীন হয়ে পড়া জঙ্গিদের এ বার কাশ্মীরে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ।

গোয়েন্দাদের কাছে চিন্তার হল আল-কায়দার জঙ্গি ও সম মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠীর জঙ্গিদের এ বার এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা শুরু করেছে আইএসআই। এদের সকলকে আফগানিস্তানে জড়ো করার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দিনে এদের লক্ষ্যই হবে যে কোনও মূল্যে উপত্যকাকে অশান্ত করা। গোয়েন্দাদের মতে, কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে আফগানিস্তানে ইতিমধ্যেই জঙ্গি সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছে আল কায়দা। তালিব জঙ্গিদের ওই লড়াইয়ে স্বাগত জানিয়েছে তারা। কাশ্মীরকে ছিনিয়ে নেওয়ার সশস্ত্র অভিযান ফি দিন শক্তিশালী হচ্ছে আফগানিস্তানের মাটিতে। এই পরিস্থিতিতে আগামী এক-দেড় মাসে বিশেষ করে উপত্যকায় বরফ পড়ার আগে পর্যন্ত আইএসআই বড় মাপের অনুপ্রবেশ চালানোর প্রচেষ্টা চালাবে, তা বুঝতে পারছে নয়াদিল্লি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, আপাতত অনুপ্রবেশ রোখা আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে সীমান্তে প্রয়োজনীয় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে সেনা মোতায়েনও বাড়ানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement