সীমান্তে নজরদারি। —ফাইল চিত্র।
পর পর পাঁচ দিন। সোমবার রাতেও ফের নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করল পাকিস্তানি ফৌজ। পহেলগাঁও কাণ্ডের আবহে এই নিয়ে টানা পাঁচ রাত কাশ্মীর উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে গুলিবর্ষণ করেছে পাক সেনা। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, গত রাতে কাশ্মীরের কুপওয়ারা এবং বারামুল্লা জেলার কাছে নিয়ন্ত্রণরেখার অপর প্রান্ত থেকে বিনা প্ররোচনায় গুলিবর্ষণ শুরু করে পাকিস্তানি সেনা। কাশ্মীরের আখনুর সেক্টরের বিপরীত প্রান্ত থেকেও গুলি চালিয়েছে পাক ফৌজ। তার জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। ভারত-পাক কূটনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীর উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তাপও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন শুরু করে পাকিস্তানি সেনা। সেই থেকে সোমবার পর্যন্ত পর পর পাঁচ দিন একই ঘটনা ঘটল নিয়ন্ত্রণরেখার অপর প্রান্তে বিভিন্ন জায়গা থেকে। মঙ্গলবার সকালে ভারতীয় সেনা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার রাতের ওই প্ররোচনায় ‘পরিমিত এবং কার্যকর’ জবাব দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের হত্যালীলায় ২৬ জন নিরস্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই পর্যটক। ওই হামলায় কয়েক জন স্থানীয় জঙ্গি জড়িত থাকলেও বাকিরা পাকিস্তান থেকেই প্রবেশ করেছিল বলে সন্দেহ করছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকের পরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কড়া কূটনৈতিক পদক্ষেপ করে ভারত। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিলের পাশাপাশি স্থগিত করে দেওয়া হয় ৬৫ বছরের পুরনো সিন্ধু জলচুক্তি। বন্ধ করে দেওয়া হয় অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত। পাকিস্তানি দূতাবাসে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আধিকারিকদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে তাঁদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয় নয়াদিল্লি।
পরের দিন, গত বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর ভারতের বিরুদ্ধেও পাল্টা বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করে পাকিস্তান। তারা হুঁশিয়ারি দেয়, জলপ্রবাহ বন্ধ করা হলে সেটিকে ‘যুদ্ধ’ হিসাবে দেখা হবে। পাকিস্তান আরও দাবি করে, শিমলা চুক্তি স্থগিত করারও অধিকার রয়েছে তাদের। বস্তুত, ১৯৭২ সালে এই শিমলা চুক্তির মাধ্যমেই কাশ্মীর উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণরেখা তৈরি হয়েছিল। চুক্তি অনুসারে, ওই সময়ে যে দেশের বাহিনী কাশ্মীরের যেখানে অবস্থান করছিল, সেখানেই অবস্থান করবে। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে।