মাটি ফুঁড়েই যেন উঠে এল লোকগুলো। আর দিল্লি চিড়িয়াখানার বেঞ্চে বসা তিন জন দেখল, পালাবার পথ নেই। লোকগুলো ঘিরে ফেলেছে তাদের। বেঞ্চে বসা দু’জন তখন সবেমাত্র কয়েকটা প্যাকেট দিয়েছে তৃতীয় জনকে।
বুধবার বিকেলে তিন জনকেই হাতেনাতে ধরার পর দিল্লি পুলিশের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ওই প্যাকেটে ছিল গুজরাত ও রাজস্থানের পাক সীমান্তে বিএসএফের গতিবিধি সংক্রান্ত নানা নথি। আর বেঞ্চে বসা যে ‘তৃতীয় ব্যক্তি’কে সেই প্যাকেট দেওয়া হচ্ছিল, তিনি দিল্লির পাক হাইকমিশনের কর্মী। নাম, মেহমুদ আখতার। চরবৃত্তির অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করেছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। আজ রাতে যার পাল্টা হিসেবে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী সুরজিৎ সিংহকে বহিষ্কার করেছে পাক সরকার।
দিল্লি পুলিশের দাবি, মেহমুদ আসলে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের লোক। দীর্ঘদিন নজর রেখেই ধরা হয় তাঁকে। মেহমুদের হাতে ওই নথি যারা তুলে দিচ্ছিল, তারা দু’জনেই ভারতীয়। মৌলানা রমজান এবং সুভাষ জাঙ্গির নামে এই দু’জনেরই বাড়ি রাজস্থানে। মেহমুদকে কূটনৈতিক নীতি মেনেই পাক হাইকমিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে সপরিবার ভারত ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
গত দেড় বছর ধরে রাজধানীতে এক চর-চক্রের সক্রিয় থাকার আঁচ পাচ্ছিলেন গোয়েন্দারা। গত ২৫ অক্টোবর সকালে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখাকে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ জানায়, ২৬ তারিখে দিল্লি চিড়িয়াখানায় দেখা করবে তিন পাকিস্তানি গুপ্তচর। ঠিক কোথায় দেখা হবে, তা-ও স্পষ্ট জানিয়ে দেন গোয়েন্দারা। সেই মতো নির্দিষ্ট বেঞ্চের আশেপাশে ফাঁদ পাতে দিল্লি পুলিশ।
অভিযান সফল হওয়ার পর কেউ কেউ বলছেন, এটা আরও একটা ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’। পুলিশ জানাচ্ছে, ধরা পড়ার পরে বারবার পরিচয় বদলাচ্ছিলেন মেহমুদ। একটি আধার কার্ডও দেখান তিনি। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেই কার্ডটি ভুয়ো। এর পর পুলিশ গ্রেফতার করার কথা বলতেই ফুঁসে উঠে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা আমায় ছুঁতে পর্যন্ত পারবেন না। কারণ আমার কূটনৈতিক রক্ষাকবচ রয়েছে। আমি দিল্লির পাক হাইকমিশনের কর্মী। ভিসা দফতরে কাজ করি। আমার নাম মেহমুদ আখতার।’’
রহস্যের জট খুলে যায়। জানা যায়, ১৯৯৭ সালে পাক সেনার বালুচ রেজিমেন্টে যোগ দেন মেহমুদ। ২০১৩-য় ডেপুটেশনে যান আইএসআই-তে। সেই বছরেরই সেপ্টেম্বরে দিল্লির পাক হাইকমিশনে ভিসা দফতরের কর্মী হিসেবে পাঠানো হয় তাঁকে। দিল্লি পুলিশের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) রবীন্দ্র যাদবের কথায়, ‘‘পাক ভিসার জন্য যাঁরা আসতেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই চর নিয়োগের চেষ্টা করতেন মেহমুদ।’’ রমজান ও সুভাষ কী ভাবে গোপন নথিপত্র পেয়েছিল, তা নিয়ে আলাদা তদন্ত শুরু করেছে বিএসএফ।
আজ সকালে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর ডেকে পাঠান পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতকে। যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ-সহ গোটা ঘটনা জানানো হয় তাঁকে। রাতে একই কায়দায় ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনার গৌতম বাম্বাওয়ালেকে ডেকে পাঠান পাক বিদেশসচিব ইজাজ আহমেদ চৌধুরি। জানিয়ে দেওয়া হয়, ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী সুরজিৎ সিংহকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যেতে হবে। উরি হামলার পর এমনিতেই উত্তপ্ত ভারত-পাক সম্পর্ক। এই ঘটনায় পারদ আরও চড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।