বক্তৃতা ঘিরে চাপের মুখে আচার্য

ফের বিতর্কে জড়ালেন নাগাল্যান্ডের স্থায়ী ও অসমের ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য। পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে মাস কয়েক আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বে হরেকৃষ্ণ নাম নিলেও বিপদ ঘটতে পারে। সেখানে ধর্ম পালনে সঙ্কট আছে।’’

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য

ফের বিতর্কে জড়ালেন নাগাল্যান্ডের স্থায়ী ও অসমের ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের মায়াপুরে মাস কয়েক আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘উত্তর-পূর্বে হরেকৃষ্ণ নাম নিলেও বিপদ ঘটতে পারে। সেখানে ধর্ম পালনে সঙ্কট আছে।’’ রাজ্যপালের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে নাগাল্যান্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী নাগরিক সংগঠন ‘নাগা হো হো’। তাদের মতে রাজ্যপালের এই মন্তব্য নাগাল্যান্ড তথা উত্তর-পূর্বের ভাবমূর্তি খারাপ করেছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৬ মার্চ। ওই দিন মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরে ‘প্রভুপাদ কথা’-য় আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন আচার্য। তখনই বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘ভারতের মধ্যেই উত্তর-পূর্বে এমন জায়গাও আছে, যেখানে হরেকৃষ্ণ উচ্চারণ করলেও বিপদ হতে পারে। উত্তর-পূর্বের মানুষের মধ্যে কৃষ্ণ নাম ছড়াবার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেখানে সকলে যদি সকলকে নমস্তে বলেও সম্বোধন করে তবে তাতেই ভ্রাতৃত্ব বাড়বে।’’ নিজের মতো করে ইংরেজিতে ‘নমস্তে’ শব্দের একটি ব্যাখ্যাও দেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায়: এন হল নাগাল্যান্ড, এ অরুণাচল, এম অক্ষর হবে মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরামের প্রতীক। পরের এ হল অসম, এস সিকিম, টি ত্রিপুরা ও ই শব্দের অর্থ ইস্ট বা পূর্ব। কিন্তু রাজ্যপালের বক্তৃতা এত দিন পরে জানাজানি হওয়ার পর নাগা হো হো, খ্রিস্টান সংগঠনগুলি, উত্তর-পূর্ব ছাত্র সংগঠনের তরফে তার নিন্দা করা হয়েছে। তাদের মতে, দু’টি রাজ্যের প্রধান হয়ে ভিন রাজ্যে গিয়ে এমন কথা বলা তাঁর উচিত হয়নি। উত্তর-পূর্বে নমস্তে সম্বোধনে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু জোর করে কৃষ্ণ নাম প্রচারে আপত্তি রয়েছে। আচার্যের প্রতি তাঁদের আবেদন, রাজ্যপাল হওয়ার আগে তিনি যে দলের সদস্য ছিলেন সেই দলের মতাদর্শ প্রচার করা বন্ধ করুন। নাগা হো হো দাবি করেছে, কোন রাজ্যে হরেকৃষ্ণ উচ্চারণ করে অথবা হিন্দু ধর্ম পালন করে মানুষ বিপদের মুখে পড়েছে, তা রাজ্যপালকে স্পষ্ট করে জানাতে হবে। তা না হলে, মনগড়া ভাষণ দিয়ে উত্তর-পূর্ব সম্পর্কে ভুল বার্তা দেওয়ার জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।

Advertisement

এ দিকে, অসমে কংগ্রেসের সঙ্গে রাজ্যপালের বিরোধ ও রাজভবনের সামনে কংগ্রেস কর্মীদের বিক্ষোভ দেখানো নিয়ে বিরক্ত রাজ্যপাল আজ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে রাজভবনে ডেকে পাঠান। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি, মুখপাত্র-সহ ১৫ জন কংগ্রেস নেতা রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকের পরে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলিনি। রাজ্য সরকারের মাথা আমি। রাজ্য সরকারের নিন্দা করার অর্থ আমার ব্যর্থতা। হয়তো আমার কোনও কথার ভুল ব্যাখা হয়েছে।’’ কিন্তু কংগ্রেস মুখপাত্র রিপুন বরা বলেন, ‘‘রাজ্যপাল বিভিন্ন সময় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে সব মন্তব্য করেছেন তা সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়েছে, চ্যানেলগুলিতে দেখানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে তিনি কেন কোনও আপত্তি জানাননি?’’

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি নিয়েও কংগ্রেসের সঙ্গে রাজ্যপালের মতভেদ রয়েছে। এদিন রাজ্যপাল অবশ্য কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবের পক্ষে বলেন, ‘‘ভিন দেশ থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।’’ তবে ২০১৪ সালের ভোটার তালিকাকে নাগরিক পঞ্জির ভিত্তি হিসেবে মানতে তিনি নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘চর এলাকা, কাজিরাঙা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে অবৈধ বাংলাদেশিরা রয়েছে। তাদের নাম আগে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।’’ তিনি কী বাংলাদেশি তাড়াবার জন্য রাজ্য সরকার বা কেন্দ্র সরকারের উপরে চাপ দিতে চান? প্রশ্নের উত্তরে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘তাড়ানো তো অনেক পরের কথা। আগে তাদের খুঁজে বের করে ভোটাধিকার কেড়ে নিতে হবে।’’ কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে এনআরসি সংশোধনীর বিরুদ্ধে তাঁরা রাজভবন অভিযান চালাবে।

কংগ্রেস মুখপাত্র জানান, রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য আগের মতোই ৯০:১০ অনুপাতে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য বজায় রাখা ও রূপশিখা শইকিয়া বরাকে অয়েল ইন্ডিয়ার সিএমডি নিয়োগ করার ব্যাপারে কেন্দ্রকে চাপ দেওয়া হোক। রাজ্যপাল এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন ও রাজ্য সরকারকে এ নিয়ে চিঠি দিতে বলেছেন।

এ দিকে, বড়োভূমির চারটি জেলায় বড়ো ভাষায় এনআরসি ফর্ম তৈরি ও বিতরণের বিষয়ে আরজিআইয়ের সম্মতি পেয়েছে রাজ্য সরকার। এই দাবিতে আবসু ৩৬ ঘণ্টার অনশন আন্দোলন শুরু করেছিল। এদিন এনআরসি কোঅর্ডিনেটর তথা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র কমিশনার প্রতীক হাজেলা তাঁদের আরজিআইয়ের সম্মতির কথা জানাবার পরে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement