—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাজারে রমরমিয়ে বিক্রি হওয়া বেশ কিছু ওষুধ গুণমান পরীক্ষায় মুখ থুবড়ে পড়ল। এর মধ্যে রয়েছে বদহজমের ওষুধ ‘প্যান ডি’, ক্যালসিয়াম সাপলিমেন্ট ‘শেলক্যাল’, অ্যান্টি-ডায়াবিটিক ওষুধ ‘গ্লিমেপিরাইড’, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ‘টেলমিসারটান’ ও আরও বেশি কিছু নামজাদা ওষুধ। এই ঘটনায় ওষুধগুলি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যানডার্ডস কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন’ (সিডিএসসিও)। অভিযুক্ত ফার্মা সংস্থাদের অবশ্য দাবি, কাঠগড়ায় তোলা ওষুধের ব্যাচগুলি তাদের তৈরি নয়, সেগুলি জাল।
প্রতি মাসেই এই ধরনের ওষুধের গুণমান পরীক্ষা হয়। সিডিএসসিও আধিকারিকেরা প্রতি মাসে আচমকা, কোনও আগাম নির্দেশিকা ছাড়াই বাজারচলতি ওষুধ পরীক্ষা করে দেখেন। এর আগেও এমন ‘সারপ্রাইজ় টেস্টে’ ব্যর্থ হয়েছিল বহু ওষুধ। কিন্তু অগস্ট মাসের রিপোর্টে সিডিএসসিও জানায়, তাদের পরীক্ষায় ৫০টিরও বেশি ওষুধ ‘নট অব স্যান্ডার্ড কোয়ালিটি’ (এনএসকিউ) বা যথেষ্ট গুণমানের মাপকাঠি উতরোতে পারেনি। এই সংখ্যাটি তাদের কাছে যথেষ্ট চিন্তা ও উদ্বেগের। এ ঘটনায় একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। প্রথমত, পরীক্ষায় ‘ফেল’ করা ওষুধগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই জরুরি ও বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। তা ছাড়া, এই ওষুধগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ‘হেটেরো ড্রাগস’, ‘অ্যালকেম ল্যাবরাটোরিস’, ‘হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিকস লিমিটেড’ ও ‘কর্নাটক অ্যান্টিবায়োটিকস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’-এর মতো তাবড় সংস্থার নাম।
সিডিএসসিও জানাচ্ছে, পাকস্থলীতে সংক্রমণে একটি ওষুধ খুবই ব্যবহার করা হয়, ‘মেট্রোনাইডেজ়োল’। এটি তৈরি করে পিএসইউ হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিক লিমিটেড (এইচএএল)। ব্যর্থ-তালিকায় রয়েছে এর নাম। ফার্মা সংস্থা অ্যালকেম হেল্থ সায়েন্স-এর তৈরি অ্যান্টিবায়োটিক ক্ল্যাভাম ৬২৫ এবং প্যান ডি-যে কাজ দিচ্ছে না, তা ধরা পড়েছে কলকাতার একটি পরীক্ষাগারে। সিডিএসসিও জানাচ্ছে, ওই একই ল্যাবে হায়দরাবাদের সংস্থা হেটেরো-র একটি ওষুধের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনএসকিউ-তালিকায় রয়েছে সান ফার্মাসিউটিক্যালসের তিনটি ওষুধ, গ্লেনমার্কের একটি, ম্যাকলিওডস ফার্মার একটি ওষুধের নাম। অভিযুক্ত সংস্থাগুলির মধ্যে অ্যালকেম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘‘আমরা ওষুধের গুণমানকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই। যে ওষুধগুলি নিয়ে বলা হচ্ছে, সেগুলি জাল। সে সব অ্যালকেমের তৈরি নয়। আমাদের সংস্থা নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছে।’’ একই দাবি সান ফার্মার। তাদের মুখপাত্রও বলেছে, ‘‘আমরা তদন্ত করেছি। ওষুধের যে ব্যাচগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলি সান ফার্মার তৈরি নয়।’’
চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, এই খবর মোটেই সুখকর নয়। এ ধরনের ওষুধ খেলে রোগী সুস্থ হবে না, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলবে, রোগীর চিকিৎসার খরচের বোঝা ক্রমেই ভারী হবে। অ্যান্টিবায়োটিকের গুণমান খারাপ হলে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স’ বাড়বে। অর্থাৎ সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ দেবে না। এমনিতেই এই অ্যান্টিবায়োটিক-বিপর্যয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত।