Indore-Patna Express

দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া কামরা কেটে বার করে আনলাম ৫০ জনকে

ললিপপ ধরা একটা কচি হাত। গোটা হাতে চাপ চাপ রক্ত। কনুইয়ের দিক থেকে তাজা রক্ত গড়িয়ে এসে রেললাইনের গ্রানাইট ভিজিয়ে দিচ্ছে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া এস-২ কোচের ভিতর থেকে ঝুলছে হাতটি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:৩৩
Share:

ট্রেনের ভিতর থেকে যাত্রীদের বার করে নিয়ে আসা হচ্ছে। ছবি: পিটিআই।

‘‘ললিপপ ধরা একটা কচি হাত। গোটা হাতে চাপ চাপ রক্ত। কনুইয়ের দিক থেকে তাজা রক্ত গড়িয়ে এসে রেললাইনের গ্রানাইট ভিজিয়ে দিচ্ছে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া এস-২ কোচের ভিতর থেকে ঝুলছে হাতটি। বগির দেওয়াল কেটে আটকে থাকা যাত্রীদের বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। এস-২ কোচে সামান্য ঝাঁকুনি লাগতেই ধপ করে রেললাইনের উপর খসে পড়ল হাতখানা। তখনও ওই ছোট্ট বাচ্চাটির আস্ত শরীরটা রয়ে গেছে বগির ভিতরেই। সে যে কী বীভৎস চিত্র, না দেখলে বোঝা যাবে না।’’ এক নাগাড়ে ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলে যাচ্ছিলেন এক উদ্ধারকর্মী।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বাঙালি উদ্ধারকর্মীর বাড়ি বাঁকুড়া জেলায়। কাজ করেন একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায়। সকাল সকাল অফিসারের ফোনে ঘুম ভাঙে। খবর আসে কানপুরের পুখরায়ানে ইন্দওর-পটনা এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে বিরাট বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই চোখে পড়ল মর্মান্তিক ছবি। উল্টে যাওয়া ট্রেনের একটি কামরার সঙ্গে অন্য আর একটি কামরা এক্কেবারে সেঁটে গিয়েছে। আবার একটা কামরা শূন্যে ঝুলছে।তখনও কামরার মধ্যে আটকে প্রচুর মানুষ। সেনা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

ভোররাতে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের কানপুরে মারা গেলেন শতাধিক ব্যক্তি।ছবি: পিটিআই।

Advertisement

একের পর এক বগির জানলা কেটে যাত্রীদের বের করে নিয়ে এসে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের উদ্ধারকাজ ত্বরাণ্বিত করতে নজিরবিহীনভাবে লখনউ থেকে কানপুরের মধ্যে তৈরি হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত গতিসম্পন্ন করিডোর বা গ্রিন করিডোর। ‘‘সঙ্গে সঙ্গে সেনাদের সাহায্য করার জন্য কাজে নেমে পড়লাম আমরা।’’ যোগ করলেন তিনি। ইলেকট্রিক ড্রিল মেশিন দিয়ে ধীরে ধীরে বগির দেওয়াল কাটা শুরু হল। ভিতর থেকে তখন চিৎকার আসছে, ‘‘মুঝে ভি বাঁচাও। ইধর হ্যায় ইধর।’’

‘‘দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের কামরা থেকে প্রায় ৫০ জনকে বের করে নিয়ে আসলাম। মারাও গেছেন প্রচুর যাত্রী। সংখ্যা কত জানা নেই। তার হিসেব দেবে রেল’’ গলায় উদ্বেগের সুর ওই বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারের। ট্রেনের ভিতর থেকে এক যাত্রীকে বাইরে নিয়ে আসার পর তিনি ভোরের অভিজ্ঞতা জানান তাঁকে। তিনি সেই যাত্রীর অভিজ্ঞতাও শেয়ার করলেন। কয়েক ঘণ্টা আগে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ওই যাত্রী। আচমকাই কানফাটা একটা আওয়াজ আর ঝাঁকুনি। ঘুম ভেঙে অন্ধকারে কিছুই দেখতে পারছিলেন না। শুধু বুঝতে পারছিলেন, চারপাশের সব কিছুই লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। পরের মুহূর্তেই বুঝতে পারলেন, তাঁদের কোচটা শূন্যে ঝুলছে। বুঝতে পারলেন, কী ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: পটনা-ইনদওর এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত, মৃত শতাধিক, আহত বহু

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement