লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হলে প্রমাণ হয়ে যাবে, বিরোধীদের হাতে এখনও সংখ্যায় জোর নেই। সে দিকে না গিয়ে তাই রাজনীতির মাঠে মোদী-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলির জোট গড়ার কাজে জোর কদমে নেমে পড়লেন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা।
সোমবার ফের লোকসভায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চায় জগন্মোহন রেড্ডির দল। তাঁর ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাংসদ ওয়াই ভি সুব্বা রেড্ডি আজ অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিসও পাঠিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ যে ভাবে অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘স্বাগত’ জানাচ্ছেন, তাতে বিরোধীদের টনক নড়েছে। অমিত শনিবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘এত দেরি করে কেন অনাস্থা প্রস্তাব আসছে?’’
বিরোধীরা বুঝতে পারছেন, অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন না করলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ময়দান ছেড়ে পালানোর অভিযোগ উঠবে। কিন্তু ভোটাভুটিতে মোদী সরকারকে হারানোর মতো সংখ্যাও নেই। ফলে ভোটাভুটিতে জিতে সরকার প্রমাণ করতে চাইবে, বিরোধীরা এখনও ঐক্যবদ্ধ নয়। সিপিএমের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘শেষে এটা মোদী সরকারের পক্ষে আস্থা ভোট হয়ে যেতে পারে।’’
এই পরিস্থিতিতে বরং বিরোধীরা চাইছেন, লোকসভায় যেন অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি না হতে পারে। যেমন শুক্রবারই হট্টগোলের জন্য ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীন পট্টনায়ক থেকে আঞ্চলিক দলের নেতা-নেত্রীরা বরং ২০১৯-এর দিকে তাকিয়ে আঞ্চলিক দলগুলির জোট গঠনে বেশি মন দিতে চাইছেন। সূত্রের খবর, চন্দ্রবাবু নায়ডু আগামী দু’দিনের মধ্যে আঞ্চলিক দলগুলির জোট গঠনের প্রয়াসের কথা ঘোষণা করে দিতে পারেন। চলতি মাসের শেষে মমতা দিল্লিতে আসছেন। আসতে পারেন নবীন পট্টনায়কও। আঞ্চলিক দলগুলির জোটে কংগ্রেস থাকলে তা পরে হবে। এখনই কংগ্রেসকে এনে তাদের হাতে রাশ তুলে দিতে নারাজ আঞ্চলিক দলগুলির নেতানেত্রীরা।
তেলুগু দেশম এনডিএ ছাড়ার পরে, অন্ধ্রের দুই প্রধান দল, তেলুগু দেশম এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মধ্যে কে বেশি মোদী সরকারের বিরোধী, তা প্রমাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আজও বিজয়ওয়াড়ায় নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে চন্দ্রবাবু বলেছেন, ‘‘আমিও এক জন প্রবীণ নেতা। কিন্তু আমার কোনও অহংবোধ (ইগো) নেই।’’
বিরোধী দলগুলির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, জগন্মোহন কি অনাস্থা প্রস্তাব এনে বিজেপিরই ফায়দা করে দিতে চাইছেন? কারণ চন্দ্রবাবু ও তাঁর দলের নেতারা গত কাল ও আজ তৃণমূল, বাম ও অন্য বিরোধী দলের নেতাদের বুঝিয়েছেন, জগন্মোহনের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁত রয়েছে। এক দিকে জগন্মোহনের দল অনাস্থা প্রস্তাব আনছে। অথচ তার আগেই তাদের দলের নেতা বিজয়সাই রেড্ডি মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত কালই চন্দ্রবাবু দলকে নির্দেশ দিয়েছেন, জগন্মোহনের ‘আসল চেহারা’ তুলে ধরতে হবে সব দলের কাছে।
অমিত অবশ্য দেখাতে চাইছেন, ২০১৯-এ মোদী সরকার বনাম অন্য দলগুলির জোটের লড়াই হলেও তিনি চিন্তিত নন। এই সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েই বিজেপি সভাপতি বলেছেন, ‘‘এক সময় ইন্দিরা গাঁধী বনাম অন্যরা ছিল। এখন পরিস্থিতি বদলে নরেন্দ্র মোদী বনাম অন্যরা হয়ে গিয়েছে। মানুষ ঠিক করবেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপরে তাঁদের আস্থা রয়েছে, নাকি তাঁরা কমলালেবুর মতো জোটের পক্ষে ভোট দেবেন?’’