অর্ণব গোস্বামী।
রিপাবলিক টিভির কর্ণধার অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে সরকারি তথ্য ফাঁসের তদন্ত দাবি করে সরব হলেন বিরোধীরা। কংগ্রেস, শিবসেনা, এনসিপি, তৃণমূল কংগ্রেস— নিরাপত্তার গোপন তথ্য ফাঁস ও টেলিভিশন চ্যানেলের টিআরপি বাড়াতে সেই তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন সকলেই। তদন্তের জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়ার দাবি জানিয়েছে এনসিপি।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগসাজসে নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর অভিযোগে মামলা চলছে বিজেপির অনুগত টেলিভিশন চ্যানেল রিপাবলিক টিভি-র বিরুদ্ধে। টেলিভিশন অ্যাঙ্কর অর্ণব গোস্বামী এই চ্যানেলটির এডিটর-ইন-চিফ। মামলায় চার্জশিটের অংশ হিসেবে মুম্বই পুলিশ টিআরপি নির্ধারক সংস্থা ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিল-এর প্রধান পার্থ দাশগুপ্তের সঙ্গে অর্ণবের যড়যন্ত্রমূলক কথোপকথনের একটি স্ক্রিপ্ট জমা দিয়েছে। ফাঁস হওয়া এই স্ক্রিপ্টটিতে দেখা যাচ্ছে, বালাকোট হামলা ও কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্তির মতো নিরাপত্তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অর্ণবকে আগে থেকেই জানানো হয়েছে। ঘটনার আগেই তিনি তা নিয়ে পার্থের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কী ভাবে সেগুলি উপস্থাপনা করা হবে, তা নিয়েও কথাবার্তা বলেছেন।
রিপাবলিক টিভি-র রেটিংয়ে দুর্নীতির দায়ে জেলবন্দি পার্থের সঙ্গে অর্ণবের কথোপকথনে বিস্মিত অনেকেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর আগে দাবি করেছিলেন, বালাকোট হামলার দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল না। ২০১৯-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে দেখে তিনি ওই দিনই হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ, তাতে ‘ভারতের বিমান পাকিস্তানের রেডারে ধরা পড়বে না’। অর্ণব কিন্তু এর তিন দিন আগেই পার্থকে জানাচ্ছেন, পুলওয়ামার জবাবে ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই হামলাটি করা হবে। এর ফলে ‘বিগ ম্যান’-এর যে জনপ্রিয়তা বাড়বে, সে বিষয়েও সহমত হয়েছেন দু’জনে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, প্রথমত জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এই সব তথ্য এক জন টিভি অ্যাঙ্করের কাছে পৌঁছয় কী ভাবে, যা তিনি নিজের টিভিকে জনপ্রিয় করতে ব্যবহার করেন? দ্বিতীয়ত, তিনি জানা এবং তা নিয়ে লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করার অর্থ, অনেকেই তা জানেন। সেই তথ্য যে শত্রুপক্ষের এজেন্টদের কাছে পৌঁছচ্ছে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন তিনি। একই দাবি করা হয়েছে শিবসেনার দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’-তেও। এনসিপি-র প্রদান মুখপাত্র মহেশ তাপাশে এই কথোপকথনকে জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তা তদন্তের জন্য জেপিসি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও বলেছেন, “বালাকোট হামলা থেকে ৩৭০ রদ— কী ভাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই সব তথ্য এক জন টিভি অ্যাঙ্করের কাছে পৌছে যায়, নেশন নীডস টু নো (জাতির তা জানা দরকার)!”