জাতগণনার দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। ফাইল চিত্র।
যদি সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫০ শতাংশের বেশি আসন সংরক্ষণ করা যেতে পারে, তা হলে ওবিসিদের জনসংখ্যা অনুযায়ী আরও আসন সংরক্ষিত হবে না কেন!
আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের জন্য চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষণে সুপ্রিম কোর্ট সিলমোহর দিয়েছে। সংরক্ষণে ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমাও ভাঙা যায় বলেও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরেই আজ দাবি উঠেছে, অবিলম্বে জাতগণনা করা হোক।
বিজেপি শিবিরের আশঙ্কা, জাতগণনা হলেই ওবিসি-দের আসল সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে যাবে। ওবিসিদের জন্য এখন ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু অনেকেরই ধারণা, ওবিসিদের আসল সংখ্যা জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই তখন ওবিসিদের জন্য আরও বেশি সংরক্ষণের দাবি উঠবে। উচ্চবর্ণ বা জেনারেল ক্যাটেগরির জন্যই আসন কমে গেলে উচ্চবর্ণের ক্ষোভের মুখেও বিজেপিকে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে এত দিন মোদী সরকারের ঢাল ছিল ইন্দ্রা সাহনে মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়। কারণ তাতে বলা ছিল, সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা ৫০ শতাংশ। আজ সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ নিজেই বলেছে, এই ঊর্ধ্বসীমা অলঙ্ঘনীয় নয়।
নরেন্দ্র মোদী নিজে ওবিসি শ্রেণিভুক্ত। বিজেপি মোদীর নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ, বিহারে এসপি, আরজেডি-র ওবিসি ভোটে ভাগ বসিয়েছে। সেই সঙ্গে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে উচ্চবর্ণের মন জিততেই মোদী সরকার উচ্চবর্ণের মধ্যে গরিবদের জন্য ১০ শতাংশ ইডব্লিউএস (ইকনমিক্যালি উইকার সেকশন) কোটার ব্যবস্থা করেছিল। আজ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে বিজেপি গুজরাত, হিমাচলের ভোটে এর সুফল পাওয়ার আশা করছে।
মোদী সরকারর মন্ত্রী থেকে নেতারা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, গরিব-দরদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দরিদ্রদের সামাজিক ন্যায়ের যে লক্ষ্য নিয়েছেন, তার জয় হল।
উল্টো দিকে বিজেপিকে চাপে ফেলতে আরজেডি দাবি করেছে, অবিলম্বে জাতগণনা করা হোক। আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা-র যুক্তি, সামাজিক ন্যায়ের ক্ষেত্রে বিজেপির এই দ্বিচারিতা চলতে পারে না। ওবিসিদেরও তাদের জনসংখ্যা অনুযায়ী সংরক্ষণ পাওয়া উচিত। কংগ্রেসও জাতগণনার পক্ষে। সংসদে কংগ্রেস আগেই এই দাবি তুলেছে। মনমোহন জমানায় আর্থ-সামাজিক জাতগণনা হলেও তাতে ত্রুটি ছিল জানিয়ে প্রকাশ করা হয়নি। রাহুল গান্ধী সম্প্রতি জাতগণনা নিয়ে বলেছেন, কোন সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা কত, তা জানা উচিত।
কংগ্রেসের দলিত নেতা উদিত রাজ আজ আবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদেরই ‘জাতবাদী’ বলে নিশানা করেছেন। তাঁর যুক্তি, এসসি, এসটি, ওবিসিদের সংরক্ষণের বেলায় সুপ্রিম কোর্ট বলে কোনও ভাবেই ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ দেওয়া যাবে না। সেই সুপ্রিম কোর্টই উচ্চবর্ণের ইডব্লিউএস কোটার প্রশ্ন এলে বলে, ৫০%-এর সংরক্ষণের ঊর্ধ্বসীমা বাধ্যতামূলক নয়।
বিজেপি মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া পাল্টা যুক্তিতে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী গরিবের ক্ষমতায়নের কথা ভাবেন। সুপ্রিম কোর্ট সেই ভাবনাতেই সিলমোহর দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টকে প্রশ্ন করছে। কারণ কংগ্রেস গরিব-বিরোধী।” উদিতের যুক্তি, “আমি ইডব্লিউএস কোটার বিরোধী নই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট দু’রকম অবস্থান নিচ্ছে।” কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, মনমোহন সরকারের আমলেই আর্থিক মাপকাঠিতে সংরক্ষণ ঠিক করতে সিনহো কমিশন গঠন করা হয়ে গিয়েছিল। তার সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৪-য় সংবিধান সংশোধনী বিলও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মোদী সরকারই সংসদে সেটি পেশ করতে পাঁচ বছর দেরি করেছিল।