পঠানকোট তদন্ত

পাক দল নিয়ে তিরের মুখে মোদী সরকার

পঠানকোট তদন্তে পাক তদন্তকারী দল ভারতে আসার পরেও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে এতে তদন্তে সুবিধে হবে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। তাদের আশা, এর পরে একটি ভারতীয় তদন্তকারী দলকে পাকিস্তানে যাওয়ার অনুমতি দেবে ইসলামাবাদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৬ ০৪:১২
Share:

পঠানকোট তদন্তে পাক তদন্তকারী দল ভারতে আসার পরেও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তবে এতে তদন্তে সুবিধে হবে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। তাদের আশা, এর পরে একটি ভারতীয় তদন্তকারী দলকে পাকিস্তানে যাওয়ার অনুমতি দেবে ইসলামাবাদ।

Advertisement

পঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলার তদন্তে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিল নওয়াজ শরিফ সরকার। এই বিষয়ে শরিফের উপরে কিছুটা আস্থা রাখতে রাজি নরেন্দ্র মোদীও। সেই সহযোগিতার সূত্র ধরেই ভারতে এসেছে পাঁচ সদস্যের পাক দল। নেতৃত্বে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে সন্ত্রাসদমন দফতরের প্রধান মহম্মদ তাহির রাই। দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তনভির আহমেদও। যে আইএসআই ভারতে পাক মদতপুষ্ট নাশকতায় যুক্ত বলে বার বার অভিযোগ করেছে দিল্লি। আজ ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাক গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার পঠানকোট বায়ুসেনা ঘাঁটিতে যাওয়ার কথা তাঁদের।

বিরোধীদের মতে, পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘দলে আইএসআই অফিসার রয়েছেন কেন? ওই গুপ্তচর সংস্থা যে ভারতে জঙ্গি হানায় জড়িত তার প্রমাণ তো অনেক বার পাওয়া গিয়েছে।’’ আপ নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের মতে, এ ক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দাদের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা। উল্টে পাক গোয়েন্দারা ভারতে আসছেন।

Advertisement

মোদী সরকারের যুক্তি, পাক গোয়েন্দারা পঠানকোট ঘুরে গেলে দিল্লির বিরুদ্ধে সহযোগিতা না করার অভিযোগ তুলতে পারবে না পাকিস্তান। ফলে, ভারতীয় তদন্তকারীদের সে দেশে পাঠানোর দাবি জোরালো ভাবে তোলা সম্ভব হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, ‘‘আইএসআই যত ক্ষণ এই তদন্তে যুক্ত আছে তত ক্ষণই কিছুটা সাফল্যের আশা রয়েছে। কারণ, জঙ্গি দমনে পাক সেনা ও আইএসআইয়ের সাহায্য ছাড়া শরিফ এগোতে পারবেন না।’’

স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের মতে, বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পাক গোয়েন্দাদের যাওয়া নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। কারণ, তাঁদের কতটা তথ্য জানতে দেওয়া হবে তা নিয়ন্ত্রণ করার দক্ষতা দিল্লির আছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের বক্তব্য, ‘‘বায়ুসেনা ঘাঁটির যে অংশে বিমান, হেলিকপ্টার রয়েছে সেখানে পাক গোয়েন্দাদের ঢুকতে দেওয়ার প্রশ্ন নেই। যে অংশে জঙ্গি হামলা হয়েছিল তা বেশ কিছু দিন ধরেই এনআইএ-র হাতে। সেখানে এনআইএ কাকে ঢুকতে দেবে সেটা তাদের ব্যাপার।’’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, এএসজি ও বিএসএফের জওয়ান বা বায়ুসেনার কম্যান্ডোদের প্রশ্ন করতেও পারবেন না পাক গোয়েন্দারা।

তবে পাক দলকে হামলায় জইশ-ই-মহম্মদের জড়িত থাকার অনেক প্রমাণ দেওয়া হবে। তার মধ্যে রয়েছে তিন জইশ নেতা মৌলানা মাসুদ আজহার, রউফ আসগর ও কাশ্মিফ জানের কণ্ঠস্বরের নমুনা। পঠানকোটে হামলার সময়ে জঙ্গিদের মোবাইলে আড়ি পেতে ওই নেতাদের কথাবার্তা রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পাক অস্ত্রশস্ত্র, জামাকাপড়, জুতো, খাবার, ওষুধও দেখানো হবে সে দেশের গোয়েন্দাদের। হামলার আগে এক জঙ্গি পাকিস্তানে মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিল। তার পরিবারের ডিএনএ নমুনাও চাওয়া হবে।

পঞ্জাব পুলিশের এসপি সলবেন্দ্র সিংহের গাড়ি ছিনতাই করে পঠানকোট ঘাঁটিতে গিয়েছিল জঙ্গিরা। পাক গোয়েন্দারা চাইলে তাঁদের সলবেন্দ্র ও তাঁর বন্ধু রাজেশ বর্মার সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হবে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। গাড়ি ছিনতাইয়ের পরে সলবেন্দ্র ও রাজেশকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয় জঙ্গিরা। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছিলেন রাজেশ।

পাকিস্তানের তরফে পঠানকোট ঘাঁটির বেস কম্যান্ডার ও অন্য অফিসারদের মোবাইলের আইএমআইইআই নম্বর, সীমান্তে বিএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ, নিহত জঙ্গিদের ডিএনএ নমুনা ও তাদের মোবাইলের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement