বিরোধী উত্থানে খেই হারাচ্ছে বিজেপি

নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে বিরোধীদের শক্তি সঞ্চয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বিগ্ন তাঁর দলও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

নোট বাতিলকে কেন্দ্র করে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে বিরোধীদের শক্তি সঞ্চয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বিগ্ন তাঁর দলও।

Advertisement

প্রথমে পাকিস্তানের মাটিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। তাতেও ফায়দা না মেলায় পাঁচশো, হাজারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা নিশ্চিত ছিলেন, এই সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজনীতির নকশা পাল্টে দেবে। ‘আমিরি হটাও’ স্লোগান তুলে গরিবের ‘মসিহা’ হিসেবে উঠে আসবেন মোদী। আর তাতে ভর করেই উত্তরপ্রদেশের ভোট বৈতরণী পেরিয়ে যাবে বিজেপি।

কিন্তু নোট বাতিলের প্রায় ৪০ দিনের মাথায় বাস্তব ছবিটা বলছে, মোদীর সিদ্ধান্তে ধনীরা নন, সমস্যায় আসলে গরিব-মধ্যবিত্তরাই। আর সেটাকে মূলধন করেই ক্রমশ সুর চড়ছে ক’দিন আগেও কার্যত দিশেহারা বিরোধীদের। আমজনতার যে প্রশ্নটা বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি তাড়া করছে, তা হল, নিজের টাকা কবে নিজের ইচ্ছেয় তুলতে পারব? যার উত্তর জানে না দল। এমনকী খোদ প্রধানমন্ত্রীও! যিনি নিজেই আজ দলের সাংসদদের সামনে কবুল করেছেন, ৫০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন। যদিও নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত এ দিন বলেছেন, ‘‘জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে পাঁচশো-হাজারের সমস্যা কাটতে শুরু করবে।’’ কিন্তু এ কথায় ভরসা নেই বিজেপিরই অনেকের।

Advertisement

সব মিলিয়ে ক্রমশ খেই হারিয়ে ফেলছে কেন্দ্রের শাসক দল। অনেকেই ঘরোয়া ভাবে মানছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে গিয়ে কার্যত ব্যর্থ মোদী সরকার। পঞ্চাশ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া যে অসম্ভব, মোদী আজ তা ফের কবুল করায় বিরোধীরা আরও প্যাঁচে ফেলবে সরকারকে। বিশেষত উত্তরপ্রদেশে। সেখানে দলের হাল এমনই যে, ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী কানপুরে জনসভা করলেও আপাতত নিজের কেন্দ্র বারাণসীতে জনসভা করবেন না। সেখানে ২২ ডিসেম্বর কর্মীসভা করে আগে ‘জমিনি হকিকৎ’ বুঝে নেবেন তিনি। তার পর জনসভা করবেন।

এর মধ্যেই গত কাল সন্ধ্যায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের রক্তচাপ বাড়িয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদরা। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে সাংসদদের একাংশ জানিয়ে দেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে শুধু দল নয়, ডুবছে মোদীর ভাবমূর্তিও। পরিস্থিতি দ্রুত ঠিক না হলে উত্তরপ্রদেশে কোনও আশা নেই। বিজেপি সূত্রের খবর, ক্ষুব্ধ অমিত বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’ সফল করতে হবে তাঁদেরই। যদিও এই অমিত-নির্দেশে কতটা কাজ হবে, বলা কঠিন।

দলের অন্দরে ক্ষোভের আঁচ টের পাচ্ছেন মোদীও। তাই সংসদের শেষ দিনটিকেই বার্তা দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। গত ক’দিন ধরে রাহুল গাঁধী সুর চড়ানোয় আজ মোদীর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কংগ্রেস। দলের সাংসদদের সামনে মোদী জানান, ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গাঁধীর আমলে ওয়াংচু কমিটি নোট বাতিলের সুপারিশ করলেও ভোটে হারের ভয়ে ইন্দিরা তা করেননি। মোদীর কথায়, ‘‘তখন ইন্দিরা ওই সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখন ঠিক করতে হচ্ছে আমায়।’’ বিরোধীদের আক্রমণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চাণক্যের শ্লোক উদ্ধৃত করে মোদী বলেন, ‘‘দুর্নীতি থেকে আয় ১০ বছরের বেশি থাকে না।’’ প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, ইউপিএ-র দশ বছরে অর্জিত কালো টাকা এখন বাতিল হয়ে যাওয়াতেই এত ক্ষুব্ধ কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা।

এত দিন ‘ডিজিটাল-ডিজিটাল’ করা মোদী আজ স্বীকার করে নিয়েছেন, দেশের সিংহ ভাগ মানুষের কাছেই ই-ওয়ালেট সুবিধা অধরা। তাই তাঁর বার্তা, ‘‘মানুষকে ডিজিটাল হওয়ার ফায়দা বোঝাতে হবে।’’ গত কালই ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহ দিতে লটারি চালু করেছে সরকার। এর ফায়দা জনগণকে বোঝানোর জন্যও দলকে পরামর্শ দিয়েছেন মোদী। এ নিয়েও বিরোধীদের কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement