নিখোঁজই ছাত্র, মোদীর নিন্দায় সরব বিরোধীরা

আজ ২১তম দিন। তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ দিল্লির জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র নজীব অহমদ। অভিযোগ, গত ১৪ অক্টোবর রাতে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এভিবিপি-র সঙ্গে মারপিটের পর থেকেই তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নির্দেশে তল্লাশি করেও নজীবের কোনও হদিস পায়নি দিল্লি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

নজীব অহমদ

আজ ২১তম দিন।

Advertisement

তিন সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ দিল্লির জহওরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র নজীব অহমদ। অভিযোগ, গত ১৪ অক্টোবর রাতে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এভিবিপি-র সঙ্গে মারপিটের পর থেকেই তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের নির্দেশে তল্লাশি করেও নজীবের কোনও হদিস পায়নি দিল্লি পুলিশ।

উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে দিল্লির এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদী-সমালোচনার উপাদান পেয়ে এক জোট হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বিরোধী নেতারা। নিখোঁজ ছাত্রের মায়ের চোখের জল মুছতে গতকাল এক মঞ্চে দেখা গিয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, সিপিএমের পলিটব্যুরো নেতা প্রকাশ কারাট এবং কংগ্রেস নেতা শশী তারুরকে। সেই মঞ্চ থেকে কেজরীবাল আবেদন জানিয়েছেন, জেএনইউ পরিসর থেকে বেরিয়ে এই আন্দোলন হোক ইন্ডিয়া গেটে। অতীতে যে ভাবে অণ্ণা হজারের আন্দোলনকে তিনি সফল করেছিলেন, এ বার নিখোঁজ ছাত্রকে সামনে রেখে তার পুনরাবৃত্তি করতে চান কেজরী। লক্ষ্য স্পষ্ট, নজীবকে সামনে রেখে কেন্দ্র-বিরোধী রাজনীতির সুর চড়ানো।

Advertisement

আসলে জেএনইউ নিমিত্ত মাত্র। ‘এক পদ এক পেনশন’ নীতির ফাঁকফোকর, জওয়ানের আত্মহত্যা, জেএনইউয়ের ছাত্র-নিখোঁজ—যেখানেই মোদী বিরোধিতার উপাদান ছড়িয়ে আছে, সেখানেই নতুন নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করে পাশাপাশি আসছেন বিরোধী নেতারা। সে উত্তরপ্রদেশের মহাজোটের ভাবনাতেই হোক বা জওয়ানের আত্মহত্যার ঘটনায় রাহুল-কেজরীবালের সমর্থনে তৃণমূলের বার্তায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী বিরোধিতায় রোজই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন অঙ্ক। যারই একটা ছবি দেখা গেল গতকাল। নিখোঁজ নজীবের প্রশ্নে গলা মেলালেন বাম-কংগ্রেস-আপ নেতারা।

কী ঘটেছিল নজীবের সঙ্গে?

নজীবের বন্ধুরা জানাচ্ছেন, ১৪ অক্টোবর রাতে হস্টেলে নিজের ঘরেই ছিলেন এই ছাত্র। সে সময়ে নির্বাচনী প্রচারে সেখানে উপস্থিত হন বেশ কিছু এভিবিপি সমর্থক। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ‘‘দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারপর ধাক্কাধাক্কি। প্রাথমিক ভাবে ঝামেলা মিটে গেলেও ফের দলবল জুটিয়ে ফিরে আসেন এভিবিপি সমর্থেকরা। তাঁদের হাতে মার খান নজীব।’’

পরদিন সকাল থেকে নিখোঁজ নজীব। নজীবের এক বন্ধু পুলিশকে জানিয়েছেন, ভোরবেলায় নজীবকে একটি স্কুটারের পিছনে বসে চলে যেতে দেখেছেন তিনি। কে চালাচ্ছিল স্কুটার, তার সঙ্গে নজীব কোথায় গিয়েছেন বা এখন কোথায় রয়েছেন— এ সব বিষয়ে কোনও তথ্য নেই বসন্ত কুঞ্জ থানার কাছে। বিষয়টি স্থানীয় থানা, উপ-রাজ্যপাল হয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও পৌঁছেছে। তা সত্ত্বেও নজীব কোথায়, সে বিষয়ে এখনও অন্ধকারে গোয়েন্দারা।

নজীবের বন্ধুদের দাবি, যে এভিবিপি সমর্থকেরা নজীবকে মারতে এসেছিলেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই নজীবের খোঁজ পাওয়া যাবে। অভিযোগ উঠেছে, এভিবিপি-র সদস্য বলে তাঁদের আটক করে কোনও প্রশ্ন করছে না পুলিশ। পাল্টা অভিযোগে সরব এভিবিপিও। তাদের যুক্তি, সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পরিকল্পিত ভাবেই নজীবকে জেএনইউ হস্টেলের কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে অতি বাম সংগঠন এআইএসএ-র সদস্যরা। এভিবিপির জেএনইউ-র সচিব ললিত পাণ্ডের অভিযোগ, ‘‘মহঃ কাশিম নজীবের সঙ্গে হোস্টেলের এক ঘরে থাকত। ও এআইএসএ-র সদস্য। সে একাধিকবার বয়ান বদল করেছে। আমাদের সন্দেহ, এই কাশিমেরাই পরিকল্পিত ভাবে কিছু শিক্ষকের সহায়তায় হস্টেলেই কোথাও নজীবকে আটকে রেখেছে।’’

জেএনইউ ছাত্র রাজনীতির অন্যতম আঁতুড়ঘর হওয়ার ফলে এর উপরে নজরও থাকে সর্বক্ষণ। ফলে স্বভাবতই ছাত্র নিখোঁজের এই ঘটনায় এক এক করে ছুটে আসতে শুরু করেছেন সব দলের নেতারা। মুসলিম ছাত্র নিখোঁজের সঙ্গে বিজেপির ছাত্র সংগঠনের নাম জুড়ে যাওয়ায় বিরোধিতার প্রশ্নে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না বিরোধীরা। সূত্রের খবর, বিষয়টি সংসদে তুলতে ইতিমধ্যেই কেজরীবালের পক্ষ থেকে ঘরোয়া ভাবে তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিজেপি-বিরোধী দলের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, জওয়ানের মৃত্যুর পাশাপাশি নজীব-প্রসঙ্গ তুলেও এ বার সংসদে সরকারকে কোণঠাসা করতে এককাট্টা হবে বিরোধী দলগুলি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement