প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
মণিপুর তরজাকে ঘিরে সোমবার সংসদে গান্ধীমূর্তির সামনে কার্যত ‘ইন্ডিয়া’ বনাম বিজেপির শক্তি প্রদর্শনের লড়াই হতে চলেছে। আগামিকাল প্রথমে সংসদে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র নেতাদের বৈঠক। তার পরে মণিপুর নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যের দাবিতে গান্ধীমূর্তির সামনে ধর্না দেবেন বিরোধী নেতারা। আবার গান্ধী মূর্তির সামনেই অন্যান্য রাজ্যে নারী নিগ্রহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিজেপিও। সাংসদদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদেরও সেখানে উপস্থিত থাকার কথা।
শাসক শিবিরের যুক্তি, মণিপুর নিয়ে আলোচনায় রাজি সরকার। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, বিহার বা তেলঙ্গানার মতো বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিতে যেখানে মহিলারা নিগ্রহের শিকার হয়েছেন, তা নিয়েও সরকার পক্ষ আলোচনায় আগ্রহী।
বিরোধীদের মতে, অন্যান্য রাজ্যের কথা তুলে সরকার মণিপুরের ঘটনার গুরুত্ব খাটো করতে চাইছে। আবার বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে যে ভাবে সরব, সেটা আসলে সংসদ চলতে না দেওয়ার কৌশল ছাড়া কিছু নয় বলে সুর চড়িয়েছে বিজেপিও। ‘পলায়নী মনোভাব’ ছেড়ে বিরোধীদের আলোচনায় অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে তারা।
সব মিলিয়ে দু’পক্ষের অনড় অবস্থানে প্রথম দু’দিনের মতোই আগামিকালও সংসদ ফের ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রের মতে, আগামিকাল ‘ইন্ডিয়া’র যে ধর্না হবে, তাতে উপস্থিত থাকার কথা আছে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
পটনা, বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পরে মণিপুর নিয়ে সংসদে বৈঠক করে শাসক শিবিরের নাকের ডগায় শক্তি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিরোধীরা। গত সপ্তাহে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকেই মণিপুর নিয়ে সংসদে আলোচনা ও প্রধানমন্ত্রীর জবাব চেয়ে সরব রয়েছেন তাঁরা। আগামিকাল এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ রণকৌশল ঠিক করতে ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠক ডেকেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। পটনা, বেঙ্গালুরুর পরে একে কার্যত বিরোধী জোটের তৃতীয় বৈঠক বলে ধরা হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রায় সব বিরোধী দলের নেতাই। সকাল ১০টায় সংসদে খড়্গের ঘরে ওই বৈঠক শুরু হবে।
সূত্রের মতে, ওই বৈঠকে মূলত মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকের শেষে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রায় দু’শোর বেশি সাংসদ মণিপুরের হিংসাদীর্ণ পরিস্থিতির প্রতিকার ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দাবিতে গান্ধীমূর্তির সামনে ধর্না দেবেন। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতেই হবে। প্রায় তিন মাস হয়ে গেল মণিপুর জ্বলছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান বার করতে ব্যর্থ শাসক শিবির। এর দায় নিয়ে জবাব দিতে হবে মোদীকেই।’’ আজ রাতে দিল্লি আসছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও গান্ধীমূর্তির সামনে ধর্নায় উপস্থিত থাকার কথা তাঁর।
বিজেপির পক্ষ থেকেও ওই গান্ধীমূর্তির সামনেই বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে রবিবার। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিরোধীদের প্রস্তাবিত ধর্নাকে হালকা ভাবে যে নিচ্ছে না শাসক শিবির, এটাই তার প্রমাণ। একই দিনে একই জায়গায় পাল্টা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বিরোধীদের থেকে আলো কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাই প্রকট বলে মনে হচ্ছে।
বিরোধীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পক্ষের যুক্তি, শাসক শিবিরও চায় মণিপুর নিয়ে আলোচনা হোক। কিন্তু একই সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যেও (মূলত বিরোধীশাসিত) যে নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে, তা নিয়েও আলোচনা চায় সরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের কথায়, ‘‘আমরা তো মণিপুর নিয়ে আলোচনায় রাজি। একই সঙ্গে রাজস্থান, বিহারে বা পশ্চিমবঙ্গে যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, তা নিয়েও আলোচনা হোক।’’ মালদহে এক জনজাতি মহিলার উপরে নিগ্রহের সমালোচনা করে অনুরাগ বলেন, ‘‘মহিলাদের নিগ্রহ নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তাই আমি বিরোধীদের কছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, আলোচনা থেকে পালাবেন না।’’ সূত্রের মতে, মালদহের ঘটনা নিয়ে আগামিকাল থেকে সংসদে লাগাতার সরব হওয়ার কৌশল নিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সাংসদেরা— কাল এ নিয়ে লোকসভায় আলোচনার জন্য মুলতুবি প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঘটনাচক্রে আজ মণিপুরের পাশাপাশি যে রাজ্যগুলির কথা অনুরাগ তুলেছেন, তার মধ্যে রাজস্থানে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস আর পশ্চিমবঙ্গ হল তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত। বিহারে ক্ষমতায় রয়েছে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। বিরোধীদের বক্তব্য, অন্য রাজ্যের নারী নিগ্রহের বিষয়টি এক পঙ্ক্তিতে রেখে এ হল মণিপুরের ঘটনাকে লঘু করার কৌশল। কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরমের কথায়, ‘‘মণিপুরে যা ঘটেছে, তার সঙ্গে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ বা রাজস্থানের পরিস্থিতির কী ভাবে তুলনা করা যায়? যদি বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিতে আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দিক কেন্দ্র। কিন্তু কোনও ঘটনাই মণিপুরে যে বর্বরতা ঘটেছে, তার সঙ্গে তুলনীয় নয়!’’