প্রথমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলগুলির প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা। তার পরে লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় স্তরে বিরোধী দলের মহাজোট। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল এই ভাবেই তৈরি করতে চাইছেন কংগ্রেস, বাম ও জনতা নেতারা।
আজ সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সাফ বলে দিয়েছেন, শুধু বামপন্থী ও সমাজবাদী চিন্তাধারার দল নয়, সব ধর্মনিরপেক্ষ দলকেই একজোট হতে হবে। এই জোটের প্রথম পরীক্ষা হলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সবাই মিলে একজোট হলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা সম্ভব। জেডি (ইউ) নেতা শরদ যাদবও একই সুরে বলেছেন, অ-বিজেপি দলগুলির জোটের সূত্রপাত ঘটবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থীকে আনার মধ্যে দিয়ে। এই প্রক্রিয়া সফল হলে গোটা দেশে বিজেপির উত্থান আটকানো সম্ভব হবে।
আজ শ্রমিক দিবস তথা প্রয়াত সমাজবাদী নেতা মধু লিমায়ের ৯৫-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘প্রগতিশীল দলগুলির ঐক্য’-র ব্যানারে সভার আয়োজন করেছিল জেডি (ইউ)। এই সভার পিছনে আসল লক্ষ্যই ছিল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে সব বিরোধী দলকে একজোট করার সলতে পাকানো। কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই, বসপা, জেডি(এস)-এর নেতারাও ছিলেন ।
বিরোধী জোটের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ সতর্ক করেছেন, মহাজোটের পরিভাষা যেন সঠিক হয়। মনে যেন না হয়, কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই জোট হয়েছে। এই জোট যে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, তা তুলে ধরতে হবে। দিগ্বিজয় বলেন, ‘‘১৯৭১-এও ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে মহাজোট হয়েছিল। ‘ইন্দিরা হঠাও’-এর ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইন্দিরা বলেছিলেন, ওঁরা ইন্দিরা হঠাও বলছেন, আমি বলছি, গরিবি হঠাও। এ বারও তাই সতর্ক থাকতে হবে।’’
মহাজোটের ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের মধ্যে স্ববিরোধ বাধা হয়ে উঠতে পারে, সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ইয়েচুরিও। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কে কোন দিকে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘‘মহাজোট কোনও গণিত নয়। কেউ নিজের মতাদর্শ ত্যাগ করবে না। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হল, মতাদর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঠিক করতে হবে, আমরা কোন পক্ষে রয়েছি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এর অ্যাসিড টেস্ট। ’’
শরদ যাদবের মতে, উত্তরপ্রদেশ বা দিল্লির পুরভোটে বিরোধী জোট হয়নি বলেই বিজেপি জিতে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সেই ভুল করলে চলবে না। ইয়েচুরি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের গুরুত্ব হল, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোকে কায়েম রাখা। রাষ্ট্রপতির অধিকার কম। কিন্তু তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ নজরদারি জরুরি। সাম্প্রদায়িক নজরদারি হলে মুশকিল।