সমুদ্রের তলদেশ থেকে উদ্ধার হওয়া ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার। ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর সৌজন্যে পাওয়া ছবি।
চার দিন আগে মিলেছিল ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর ডর্নিয়ের বিমানের ধ্বংসাবশেষ। কিন্তু উপকূল রক্ষী বাহিনীর তিন অফিসারের কী হল, তা জানা যায়নি তখনও। উদ্বেগ বাড়ছিল পরিবারের।
শেষমেশ সেই অফিসারদের খোঁজে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে তামিলনা়ড়ুর সমুদ্রের তলদেশে প্রায় ৯৫০ মিটার গভীরে বিমানের আরও কিছু অংশের পাশাপাশি মিলেছে বেশ কিছু দেহাংশ এবং একটি ঘড়ি। উপকূলরক্ষী বাহিনীর আইজি এস পি শর্মা জানিয়েছেন, গত কাল রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে বিমানের ৮০ ভাগ অংশই উদ্ধার করা হয়ে গিয়েছে। ৩৫ দিনের খোঁজ চলার পরে ‘‘অপারেশন তালাশ’ এ বার শেষ হল বলে আজ টুইটারে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র সীতাংশু কর।
গত ৮ জুন রাতে চেন্নাইয়ের উপকূলে রুটিন নজরদারি সেরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর বিমানটি। সেই রাতে ন’টা তেইশ মিনিটে চিদম্বরমের তিরুচিরাপল্লির উপকূল থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে রেডারে শেষ বারের মতো ধরা পড়েছিল ওই বিমানের উপস্থিতি। তার পরই রেডার থেকে উধাও হয়ে যায় সেটি। বিমানটি চালাচ্ছিলেন ডেপুটি কম্যান্ডান্ট বিদ্যাসাগর। তাঁর সঙ্গে একই বিমানে ছিলেন কো-পাইলট ডেপুটি কম্যান্ডান্ট সুভাষ সুরেশ এবং নেভিগেটর এম কে সোনি।
বিমান নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটিয়েছেন এই অফিসারদের পরিবার। বার বার তাঁদের অনেকেই স্বজনের খোঁজ জানতে চেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের। বলেছেন, এক একটা সেকেন্ডে যেন মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে তাঁদের। সেই যন্ত্রণার শেষ। তাঁরা জানলেন, কাছের মানুষটি আর ফিরে আসবে না। এ বার তাঁদের দেহাবশেষ শনাক্তকরণের পালা। ওই দেহাবশেষ এবং বিমান থেকে পাওয়া সামগ্রী ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই তিন অফিসারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর ফরেন্সিক অ্যান্ড সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ পরীক্ষাও হবে দেহাবশেষের।
উপকূলরক্ষী বাহিনীর আইজি এস পি শর্মা আগেই জানিয়েছিলেন, গত দু’দশকে এত বড় মাপের উদ্ধারকাজের সাক্ষী হয়নি উপকূলরক্ষী বাহিনী। ৬৯৩ ঘণ্টা জলে আর ১৯৬ ঘণ্টা আকাশে টানা খোঁজ চালিয়েছে উদ্ধারকারী দল। উপকূলরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে তল্লাশিতে সাহায্য করছিল তামিলনাড়ু পুলিশের একটি দল, ভারতীয় নৌসেনার সদস্যরা। বিনা খরচায় উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায় রিলায়্যান্স ইন্ডিয়া-সহ একাধিক কর্পোরেট সংস্থা। গত শুক্রবার রিলায়্যান্স ইন্ডিয়ারই জাহাজ, এমভি অলিম্পিক ক্যানিয়ন উদ্ধার করে ডর্নিয়েরটির ধ্বংসাবশেষ। উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরের মুখপাত্র কম্যান্ডান্ট আই জে সিংহ জানান ৬ জুলাই সমুদ্রের তলদেশ থেকে সঙ্কেত পেয়েছিল ভারতীয় নৌ বাহিনীর ডুবোজাহাজ সিন্ধুধ্বজ। তার পাঠানো সঙ্কেত গোটা তল্লাশি কাজে বড় রকমের সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন সিংহ।