২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক সৌম্যা বিশ্বনাথন। ছবি: সংগৃহীত।
হাতের ট্যাটু এবং পুলিশের চুরি যাওয়া ওয়্যারলেস সেটই ধরিয়ে দিয়েছিল দিল্লির সাংবাদিক সৌম্যা বিশ্বনাথন এবং তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী জিগীষার খুনিদের। এমনটাই জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। এই জোড়া খুনের ঘটনায় পাঁচ জনকে বুধবারই দোষী সাব্যস্ত করেছে দিল্লির আদালত। দোষীরা হল— রবি কপূর, অমিত শুক্ল, বলজিৎ মালিক, অজয় শেটি এবং অজয় কুমার।
তবে অন্য একটি খুনের তদন্ত করতে গিয়েই সৌম্যার খুনের বিষয়টি জুড়ে যায় বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর। কী ভাবে এই দুই খুনের যোগসূত্র খুঁজে পেলেন তদন্তকারীরা? সাংবাদিক সৌম্যা খুন হয়েছিলেন ২০০৮ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নেলসন ম্যান্ডেলা পার্কে। তার ঠিক ছ’মাস পর নেলসন ম্যান্ডেলা পার্ক থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বসন্ত বিহারে ২০০৯ সালের ১৮ মার্চ বাড়ি ফেরার পথে খুন হন জিগীষা ঘোষ নামে এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী।
জিগীষাকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছিল। তাঁর দেহ উদ্ধার হয় হরিয়ানার ফরিদাবাদের সুরজ কুণ্ড এলাকা থেকে। জিগীষার দেহ উদ্ধারের তিন দিনের মধ্যেই সেই ঘটনার কিনারা করে পুলিশ। আর সেই খুনের কিনারা হয়েছিল এক অভিযুক্তের হাতের ট্যাটু এবং অন্য এক অভিযুক্তের কাছে থাকা পুলিশের একটি ওয়্যারলেস সেট। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তদন্তকারী আধিকারিক অতুল কুমার বর্মা বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এই খুনের অভিযুক্তদের প্রথম সন্ধান পাই। এক জনের হাতে ট্যাটু ছিল। জিগীষার ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে শপিং করছিল। অন্য জনের হাতে ছিল একটি ওয়্যারলেস সেট। যে সেটটি এক পুলিশকর্মীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।”
পুলিশ জানিয়েছে, সেই সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় অভিযুক্ত বলজিৎ মালিকের। মাসুদপুরের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার পর পরই গ্রেফতার করা হয় রবি এবং অমিতকে। বলজিতের হাতেই ট্যাটু আঁকা ছিল। আর রবির হাতে ছিল ওয়্যারলেস সেট। তদন্তকারী আধিকারিক বর্মা জানিয়েছেন, তিন জনকে জেরা করতেই জিগীষার খুনের কথা প্রকাশ্যে আসে। তাঁর কথায়, “অভিযুক্ত তিন জনই স্বীকার করেছিল বসন্ত বিহারে জিগীষার বাড়ির কাছ থেকে তাঁকে অপরহণ করেছিল তারা। তার পর খুন করে তাঁর টাকাপয়সা, ডেবিট কার্ড লুট করে। সেই ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটাও করে বলজিৎরা।” বসন্ত বিহার থানার যে দলটি জিগীষার খুনের তদন্ত করছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন অতুল বর্মা।
বর্মা জানিয়েছেন, তিন অভিযুক্তকে যখন ক্রমাগত জেরা চলছিল, আশ্চর্যজনক ভাবে তাদের মধ্যে রবি নেলসন ম্যান্ডেলা পার্কে আরও একটি খুনের কথা স্বীকার করে। শুধু তাই-ই নয়, এই খুনের সঙ্গে যে অজয় কুমার এবং অজয় শেটি নামে আরও দু’জন জড়িত ছিল, সে কথাও জানায় রবি। দিল্লি পুলিশের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) এইচজিএস ঢালিওয়াল এসিপি ভীম সিংহের নেতৃত্বে সেই খুনের তদন্তের জন্য একটি দল গঠন করেন।
এসিপি ভীম সিংহ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, “অভিযুক্তেরা সাংবাদিক সৌম্যাকে খুনের কথা স্বীকার করলেও আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ফরেন্সিক প্রমাণ সংগ্রহ করা। এর পর ঘটনার রাতের তথ্য এক এক করে সংগ্রহ করা শুরু হল।” এসিপি সিংহ জানিয়েছেন, ২০০৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কাজ থেকে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সৌম্যা। সেই সময় একটি গাড়িতে যাচ্ছিল রবি, অমিত, বলজিৎ এবং অজয় কুমার। তারা প্রত্যেকেরই মত্ত অবস্থায় ছিল। গাড়ি চালাচ্ছিল রবি। পাশে বসেছিল অমিত। পিছনের আসনে ছিল বলজিৎ এবং অজয়। রবিদের গাড়িকে ওভারটেক করে এগিয়ে গিয়েছিলেন সৌম্যা। এক মহিলা তাদের গাড়িকে ওভারটেক করল, এটা মেনে নিতে পারেনি রবি, বলজিৎরা। তার মধ্যে সৌম্যাকে একা দেখতে পেয়ে তাঁর পিছু ধাওয়া করে রবিরা। তাঁর গাড়িকে ওভার করে আটকানোর চেষ্টা করে তারা। কিন্তু সৌম্যা গাড়ি নিয়ে এগিয়ে যান। তখনই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় রবি। সেই গুলি মাথায় লাগে সৌম্যার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। সৌম্যার গাড়ি একটি ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। এর পরই পালিয়ে যায় রবি, বলজিৎরা। ২০ মিনিট পর আবার সেখানে আসে তারা। কিন্তু পুলিশ দেখে আবার পালিয়ে যায়।