ওম বিড়লা। ছবিঃ পিটিআই।
প্রায় ৫০ বছর আগে ঠিক এই সময়ে, দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকার। গত দু’দিন ধরে কখনও সংসদের বাইরে, কখনও টুইট করে জরুরি অবস্থা তথা কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে সরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ লোকসভায় দ্বিতীয় বার স্পিকারের দায়িত্ব পেয়েই ওম বিড়লা জরুরি অবস্থার সমালোচনা করে সংসদের কার্যবিবরণীতে বিষয়টি নথিবদ্ধ করে রাখলেন।
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, লোকসভায় শপথগ্রহণের সময়ে নরেন্দ্র মোদীকে সংবিধান দেখিয়ে গণতন্ত্রের পাঠ শেখাতে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু কংগ্রেসই যে জরুরি অবস্থা জারি করে অতীতে দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, তা তুলে ধরা হল। শাসক শিবির আজ যখন বলছে, দেশের তরুণ সমাজের জরুরি অবস্থার সময়কাল জানা উচিত, তখন বিরোধীদের পাল্টা বক্তব্য, ৫০ বছর আগে কী হয়েছে, তা না ভেবে ভবিষ্যতের কথা ভাবা উচিত শাসক দলের।
গত দশ বছরে মোদীর বিরুদ্ধে অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগ এনে সরব বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিতে প্রভাব খাটিয়ে বিরোধীদের কোণঠাসা করা, সংবাদমাধ্যমে ছড়ি ঘোরানো, সংসদে বিরোধী স্বর চেপে দেওয়ার মতো একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণে চলতি নির্বাচনে সংবিধান রক্ষার ডাক দিয়ে প্রচারে নামেন বিরোধীরা। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের লোকসভায় শপথের সময়ে রাহুল গান্ধীরা সংবিধান তুলে ধরে তাঁদের গণতান্ত্রিক দায়িত্ববোধ মনে করিয়ে দেন।
তার পর জরুরি অবস্থা নিয়ে দু’দিন সংসদের বাইরে মোদী সরব হওয়ার পরে আজ স্পিকার এ বিষয়ে বলেন। যা পূর্বপরিকল্পিত বলে রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন। লক্ষ্য ছিল, কংগ্রেসকে আক্রমণের পাশাপাশি যারা জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল, সমাজবাদী পার্টির মতো সেই ইন্ডিয়া-শরিকদের মধ্যে বিভাজন ঘটানো। আজ জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের স্মৃতিতে কিছু সময় নীরবতা পালন করেন স্পিকার। এনডিএ সাংসদদের সঙ্গেই উঠে দাঁড়ান সমাজবাদী পার্টির সাংসদেরা। তৃণমূল সাংসদেরা অবশ্য উঠে দাঁড়াননি। পরে এসপি নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘কেবল বিজেপির লোকেরাই জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেনি। অন্য দলও করেছিল।’’ একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আর কত দিন অতীতের দিকে তাকিয়ে থাকবে বিজেপি?’’
কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘আজকের দিনে এমন বিষয় তোলা অবাক হওয়ার মতো। সরকার পরিকল্পিত ভাবে আজকের অধিবশন ভেস্তে দিতে চেয়েছিল।’’ কংগ্রেসের বক্তব্য, এটি সদনে পাশ হওয়া কোনও প্রস্তাব নয়। কেবল স্পিকারের বিবৃতি মাত্র। আজ স্পিকারের ওই বিবৃতির প্রতিবাদ জানাতে একাধিক কংগ্রেস সাংসদ ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান। যদিও বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নিজের আসনে বসেছিলেন।
স্পিকার বলেন, ‘‘ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে যে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল, তাতে দেশের নাগরিকদের অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। বিরোধী দলের নেতাদের নির্বিচারে কারাগারে পোরা হয়েছিল। তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার গণমাধ্যমের উপরে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল বিচারবিভাগের। সংবিধানে পরিবর্তন করা হয়েছিল যাতে সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে চলে আসে। এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যা আমাদের সংবিধানের ভাবনাকে নষ্ট করেছিল।’’
ঘটনাচক্রে আজ যে সব অভিযোগ স্পিকার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, সে ধরনের অধিকাংশ অভিযোগই মোদীর বিরুদ্ধে করেন বিরোধীর। রাজনীতির অনেকের মতে, বিরোধীদের আক্রমণকে ভোঁতা করতেই আজ অতীতের স্মৃতি উস্কে দেওয়ার কৌশল নেয় শাসক দল। পরে স্পিকারের ওই বক্তব্যের সমর্থনে সমাজমাধ্যম এক্স-এ মোদী লেখেন, ‘‘স্পিকার যে ভাবে জরুরি অবস্থার সমালোচনা করেছেন, তাতে আমি খুশি।... দেশের যুব সমাজের এ সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সংবিধানকে পদদলিত করা, জনমতকে স্তব্ধ করা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করার এ হল প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ...স্বৈরাচারী শাসনের উদাহরণ।’’ এনডিএ বিরোধী শিবসেনা (উদ্ধব) দলের নেতা আদিত্য ঠাকরে পাল্টা বলেন, ‘‘যে সরকার দেশে অঘোষিত জরুরি জারি রাখে, কিন্তু তা ঘোষণা করার সাহস দেখাতে পারে না, তারা জরুরি অবস্থা সম্পর্কে সরব হচ্ছে। লজ্জাজনক।’’