বলিরেখায় শীর্ণ হাত আঁচ দেয় উনুনে। যেমন দিয়ে আসছে গত দু’দশক ধরে। ওই আঁচে তৈরি হয় ইডলি, সম্বর, চাটনি। দাম মাত্র এক টাকা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও গত কুড়ি বছর ধরে এই দাম অপরিবর্তিত। সুযোগ থাকলেও এর বেশি উপার্জন করতে চান না কমালাথল। বরং, তাঁর ইচ্ছে এ ভাবেই বুভুক্ষু দরিদ্র মানুষের সামনে নামমাত্র মূল্যে খাবার পরিবেশন করা। কোয়ম্বত্তূরের এই অশীতিপর এখন জয় করেছেন সোশ্যাল মিডিয়া। (ইডলির ছবি: শাটারস্টক, কমলাথলের ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
প্রতি দিন ভোর সাড়ে ৫টায় উঠে ইডলি বানাতে বসেন কমলাথল। চলে দুপুর অবধি। দৈনিক গড়ে বিক্রি করেন ৪০০ থেকে ৫০০ ইডলি। লাভ হয় গড়ে ২০০ টাকা। ইচ্ছে থাকলেই হতে পারতেন বিত্তবান ব্যবসায়ী। কিন্তু তা হতে চাননি তিনি। বরং, যৎসামান্য মূল্যে খাবার পরিবেশনেই তাঁর আনন্দ। ( ছবি : শাটারস্টক)
হাসিমুখে বৃদ্ধা জানিয়েছেন, তিনি এ ভাবেই থাকতে চান। কোনও আক্ষেপ নেই। বরং উপার্জন করেন, তাতে তাঁর হেসেখেলে চলে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর নাম হয়েছে ‘এক টাকার ইডলি ঠাকুমা’।
কেন গ্যাস ব্যবহার করেন না? বৃদ্ধা বলেছেন, তিনি জানেনই না কী করে গ্যাসে রান্না করতে হয়। মাটির উনুনেই তিনি স্বচ্ছন্দ। রোজ আট কেজি চাল শিলনোড়ায় বেঁটে বা জাঁতায় পিষে তিনি বানান কয়েকশো ইডলি।
এই ইডলি-যজ্ঞে রোজ তাঁকে সাহায্য করেন নাতবৌ আরতি। প্রতিদিন সকাল ছ’টায় তাঁর দোকান খোলে। ক্রেতা আসতে থাকেন সাতটা থেকে। দোকান চলে যত ক্ষণ ইডলির কাঁচামাল, সম্বর আর চাটনি থাকে। (প্রতীকী ছবি)
মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ তাঁর ইডলির ক্রেতা। তাঁদের পাতে গরম গরম ইডলি পরিবেশন করাতেই পূণ্য খুঁজে পান এই বৃদ্ধা।
ক্রেতারা ভেবেই পান না কী করে এই বৃদ্ধা আজকের দিনে মাত্র এক টাকায় এক প্লেট ইডলি বিক্রি করতে পারেন! কমলাথলের কাছেপিঠে অনেকেই শুরু করেছেন ইডলি বিক্রি। তাঁরা কেউ তাঁর ধার্য মূল্যের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেননি। ফলে ভাগ বসানো যায়নি কমলাথলের ক্রেতা-সংখ্যাতেও।
সম্প্রতি কমলাথলের কথা ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁর জন্য উদ্যোগী হয়ে টুইট করেছেন শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা। আবেদন করেছেন বৃদ্ধা ইডলি বিক্রেতাকে একটা এলপিজি-র বন্দোবস্ত করে দেওয়া হোক।
আনন্দ মাহিন্দ্রার টুইটে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারত পেট্রোলিয়ম নতুন এলপিজি সংযোগ দিয়েছে কমলাথলকে।
বৃদ্ধা জানিয়েছেন, পরিশ্রমী দরিদ্র মানুষ যখন তাঁর দোকানের ইডলির প্রশংসা করেন, সেটাই তাঁর কাছে সবথেকে বড় পুরস্কার। (ছবি : সোশ্যাল মিডিয়া)