National News

এনএসজি-র নয়া খসড়া আইনে দিল্লির রাস্তা সাফ, ইসলামাবাদের পথে কাঁটা

এনএসজি সদস্যদের কাছে পৌঁছনো একটি নতুন খসড়া প্রস্তাব ওই সংগঠনে ভারতের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলেছে। তবে এই প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলেও এনএসজি (পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী) সদস্যপদের আর এক আবেদনকারী পাকিস্তানের জন্য কিন্তু দরজা খুলবে না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৪:৩৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

এনএসজি সদস্যদের কাছে পৌঁছনো একটি নতুন খসড়া প্রস্তাব ওই সংগঠনে ভারতের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে তুলেছে। তবে এই প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলেও এনএসজি (পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী) সদস্যপদের আর এক আবেদনকারী পাকিস্তানের জন্য কিন্তু দরজা খুলবে না। এনএসজি-র বর্তমান প্রধান দক্ষিণ কোরিয়ার তরফ থেকেই এই খসড়া প্রস্তাবটি পেশ করা হয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বারাক ওবামার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই প্রস্তাব পাশ হওয়ার এবং এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

Advertisement

ভারতকে এনএসজি সদস্যপদ পাইয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমেরিকা, বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কথা মতো এনএসজি-র শেষ দু’টি বৈঠকে ভারতের হয়ে আমেরিকা জোর সওয়ালও করেছে। ওয়াশিংটন শুধু দিল্লিকে সমর্থন করেছে এটুকুই নয়, দিল্লির জন্য অন্যান্য এনএসজি সদস্যদের সমর্থন জোগাড় করতেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু মূলত চিনের বাধায় ভারতের এনএসজি-প্রবেশ আটকে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, চিনের পরামর্শে পাকিস্তানও এনএসজি সদস্য হওয়ার আবেদন জানিয়েছে। এনপিটি (পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি) সই না করেও ভারত যদি এনএসজি-তে ঢোকার সুযোগ পায়, তা হলে পাকিস্তানকেও সে সুযোগ দিতে হবে, চিন প্রকারান্তরে এমনই একটি দাবি তুলে দিয়েছে। ৪৮টি রাষ্ট্রের সংগঠন এনএসজি-র বর্তমান প্রধান যে দেশ, সেই দক্ষিণ কোরিয়া চলতি মাসের গোড়ায় এমন একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছে, যা পাশ হয়ে গেলে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না। ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশগুলি যে হেতু এনএসজি সদস্য হতে আগ্রহী এবং অনেকগুলি সদস্য দেশই যে হেতু ভারতের আবেদনকে সমর্থন করছে, সে হেতু নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি এখন সংগঠনে একটি বড় ইস্যু। তার প্রেক্ষিতেই এনএসজি-তে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া তৈরি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

নতুন খসড়ায় কী বলা হয়েছে? বলা হয়েছে, যে সব পরমাণু শক্তিধর দেশ এনপিটি সই না করেও এনএসজি-র সদস্য হতে চাইছে, সেই সব দেশের সঙ্গে আইএইএ অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের একটি চুক্তি থাকতে হবে। আইএইএ-র সঙ্গে চুক্তিতে সেই দেশকে জানাতে হবে, দেশের কোন পরমাণু প্রকল্পগুলি অসামরিক। এই অসামরিক প্রকল্পগুলি থেকে সামরিক পরমাণু প্রকল্পগুলিকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এনএসজি সদস্য হওয়ার সুবাদে সদস্য দেশগুলির কাছ থেকে যে সব পরমাণু সরঞ্জাম ওই দেশ কিনবে, সেই সব সরঞ্জাম শুধু অসামরিক প্রকল্পগুলিতেই ব্যবহার করা যাবে। অসামরিক প্রকল্প থেকে পরমাণু সরঞ্জাম সামরিক প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা যাবে না। শুধু তাই নয়, এনএসজি সদস্যপদ পেতে আগ্রহী রাষ্ট্রকে আইএইএ-র সঙ্গে এমন ভাবেই চুক্তিবদ্ধ হতে হবে, যাতে আইএইএ ওই রাষ্ট্রের সব অসামরিক পরমাণু প্রকল্পে নজরদারি চালাতে পারে এবং তাদের চোখ এড়িয়ে কোনও পরমাণু সরঞ্জাম সামরিক প্রকল্পে স্থানান্তরিত করা সম্ভব না হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে বার্তা দিয়ে চিনা রণতরী তাইওয়ানের কাছে, ফের উত্তপ্ত চিন সাগর

২০০৮ সালে ভারত-আমেরিকা অসামরিক পরমাণু চুক্তি হওয়ার আগে আইএইএ-র সঙ্গে এই রকম একটি চুক্তি ভারত সেরে ফেলেছে। সেই চুক্তির সুবাদেই আমেরিকাকে ভারতের সঙ্গে অসামরিক পরমাণু বাণিজ্যের ছাড়পত্র দিয়েছিল আইএইএ। অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার পেশ করা নতুন আইনের খসড়া এনএসজি-তে পাশ হয়ে গেলে, ভারতকে আর নতুন কিছুই করতে হবে না। সে ক্ষেত্রে ভারতের এনএসজি-প্রবেশের পথে এমনিতেই খুলে যাবে। এনএসজি সদস্যপদ পাওয়ার জন্য বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে আবেদনকারী রাষ্ট্রের জন্য এনপিটি স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। কিন্তু নতুন আইনের খসড়ায় তাকে আর বাধ্যতামূলক বলা হচ্ছে না। এতে আইএইএ-র সঙ্গে পরমাণু রক্ষাকবচ চুক্তি থাকাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। চিন এত দিন আইনি প্রশ্ন তুলে ধরেই ভারতের অন্তর্ভুক্তি ভেস্তে দিচ্ছিল। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার পেশ করা খসড়াটি আইন হিসেবে গৃহীত হয়ে গেলে ভারতকে বাধা দেওয়ার কোনও আইনি অস্ত্র চিনের হাতে আর থাকবে না।

নতুন খসড়া আইন অনুযায়ী ভারতের জন্য এনএসজি-র দরজা খুললেও, পাকিস্তানের জন্য তা কিন্তু বন্ধই থাকছে। পাকিস্তান এনপিটি স্বাক্ষর তো করেইনি। আইএইএ-র সঙ্গেও তাদের কোনও চুক্তি নেই। তাই নতুন প্রস্তাবটি এনএসজি-তে পাশ হয়ে গেলেও, পাকিস্তানের এনএসজি প্রবেশের পথ খুলবে না। তবে প্রস্তাবটি পাশ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চিন এই নতুন আইনের বিরোধিতা করতে পারে। তা ছাড়া, বারাক ওবামার প্রশাসন যে ভাবে ভারতের জন্য ময়দানে নেমেছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ততটা করবে কি না, সে নিয়েও জল্পনা রয়েছে কূটনৈতিক মহলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement