শেষ মুহূর্তে আরও টানটান এনএসজির লড়াই। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর সদস্যপদ পাওয়ার লক্ষ্যে আরও খানিকটা এগিয়ে যেতে সর্বশক্তি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লি। ২৩ জুন, বৃহস্পতিবার তাসখন্দে চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক প্রায় নির্ধারিত। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকের ফাঁকে মোদী-জিনপিং-এর ওই বৈঠক হলে এনএসজি-ই যে সেখানে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠতে চলেছে, তা নিশ্চিত। অন্য দিকে ভারতের বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর চলে যাচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সোলে। সেখানে এনএসজি-র প্লেনারি অধিবেশনের সমাপ্তির আগে ভারতের দাবির পক্ষে সমর্থন আরও বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই শেষ মুহূর্তের সোল সফর বিদেশ সচিবের।
চিনের সুর আগের চেয়ে কিছুটা হলেও নরম। প্রথমে চিনা বিদেশ মন্ত্রক বলছিল, এনপিটি সই না করা পর্যন্ত এনএসজিতে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয় ভারতকে। কিন্তু আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো চার বৃহৎ শক্তি এবং এনএসজি-র অধিকাংশ সদস্য দেশ ভারতের এনপিটি স্বাক্ষর নিয়ে মাতা ঘামাতে নারাজ। পরমাণু নিরাপত্তা নিয়ে নয়াদিল্লির দায়িত্বশীল ভূমিকাকে অধিকাংশ দেশই মান্যতা দিচ্ছে দেখে এনপিটি সই করার ইস্যু থেকে সরে আসে চিন। পাকিস্তানের পরমাণু নিরাপত্তা নীতির প্রশংসা করে চিনের সরকারি মিডিয়ায় ইসলামাবাদের হয়ে সওয়াল করা শুরু হয়। ভারতকে যে সব ছাড় দেওয়া হবে, তা যেন পাকিস্তানও পায়— এমনই দাবি তোলা হয় চিনের তরফে। পাকিস্তানের হয়ে সওয়াল করে এই ভাবে পাল্টা চাপের কৌশল চিন প্রয়োগ করেছিল মঙ্গলবারই। তার পর দিনই চিনের সুর আরও একটু নরম। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বক্তব্যে আরও একটু পরিমার্জন এনে বলেছেন, ‘‘ভারত বা পাকিস্তান, কোনও দেশই আমাদের নিশানা নয়। আমরা শুধু পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তির (এনপিটি) কথা বলছি।’’ তবে এনপিটি সই না করলে কিছুতেই এনএসজিতে ঢোকা যাবে না, এমন কথাও যে চিন বলছে না, সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক বুধবারও সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছে। বলা হয়েছে, এনপিটি সই করেনি এমন দেশের অন্তর্ভুক্তির জন্যও এনএসজি-র ‘দরজা খোলা রয়েছে’। কিন্তু এনএসজি সদস্যদেরই এটা স্থির করতে হবে যে নীতি পরিবর্তন করা হবে কি না।
চিনের এই অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে ভারত। কখনও প্রণব মুখোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদী, কখনও এস জয়শঙ্কর— বার বার চিনের সঙ্গে এই দৌত্য বরফ গলাতে কিছুটা কাজে এসেছে বলে নয়াদিল্লি মনে করছে। সুষমা স্বরাজ নিজেও চিনের সঙ্গে নিরন্তর সংযোগ রেখে চলছেন। এই নিরন্তর দৌত্যের কারণেই আগামী কাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার উজবেকিস্তানের তাসখন্দে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের বৈঠকের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর মধ্যে আলাদা করে বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠক যদি হয়, তা হলে এনএসজিতে ভারতের সদস্যপদের দাবির বিরোধিতা না করার জন্য চিনা প্রেসিডেন্টকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে অবশ্যই অনুরোধ করবেন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। মোদী-জিনপিং-এর এই সম্ভাব্য বৈঠকের দিকে অনেক দেশই তাকিয়ে রয়েছে বলে কূটনৈতিক মহলের মত।
আরও পড়ুন: ভারত নিয়ে আমেরিকার চাপ, সুর নরম চিনেরও
দক্ষিণ কোরিয়ার সোলে এনএসজি-র প্লেনারি অধিবেশনও শেষ হওয়ার পথে। অনেক বাধা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত এই অধিবেশনে বারতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এই অধিবেশনেই বারতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে কি না ঠিক নেই। তবে ভারতের দাবির পক্ষে আরও বেশি সমর্থন আদায় করে এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবকে আরও জোরদার করে তোলা যাচ্ছে বলে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে। এনএসজি ইস্যুতে নয়াদিল্লি যতটা স্কোর করতে পেরেছে, তা যাতে কিছুতেই না কমে, বিদেশ মন্ত্রক এখন সে বিষয়ে যত্নবান। বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর সোল যাচ্ছেন। সেখানে এই মুহূর্তে এনএসজি-র সব সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা হাজির। শেষ লগ্নে তাঁদের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে ভারতের অবস্থান আরও মজবুত করতেই জয়শঙ্করের এই সোল সফর। অতএব বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলের নজর সবচেয়ে বেশি থাকছে তাসখন্দ আর সোলে।