ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার ঘনিষ্ঠ মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। অসমের জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) প্রথম খসড়া ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার প্রকাশ্যেই মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের জনসভায় ঘোষণা করলেন, ‘‘বাঙালিদের গায়ে হাত পড়লে আমি ছেড়ে কথা বলব না।’’
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে এনআরসির প্রথম খসড়াটি প্রকাশ হয়েছে। প্রায় সওয়া তিন কোটি আবেদনের মধ্যে ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের তথ্যপ্রমাণ যাচাই করার পর এই খসড়া তৈরি হয়েছে। এই ‘বিদেশি বাছাই’ নিয়ে সরব অসমের বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিভিন্ন বাংলাভাষী সংগঠন। মমতারও আশঙ্কা, এর পরে অসমের বাঙালিদের উপরে আঁচ পড়বে। এবং ‘‘অসম পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য। সেখানে গোলমাল হলে তার প্রভাব আমাদের রাজ্যেও পড়বে,’’ বলেছেন মমতা। কেন্দ্র ও অসমের বিজেপি সরকারের নাম না করেই এ দিন তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘আগুন নিয়ে খেলবেন না।’’
মমতা বিজেপি-কে বিঁধলেও তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে বিরোধী কংগ্রেস-সহ সব দলই। বিজেপির দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে হওয়া আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে এমন মন্তব্য খোদ সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা। মমতা হয় নাগরিক পঞ্জি ব্যাপারটা বোঝেননি, না হলে ইচ্ছাকৃত ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য এমন মন্তব্য করেছেন। দলের মুখপাত্র রূপম গোস্বামীর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের ভোট ব্যাঙ্ক মজবুত করতে বাংলাদেশিদের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দিয়েছেন। এখন অসম বিদেশিমুক্ত রাজ্য তৈরির জন্য যে পদক্ষেপ করছে তা বাংলাতেও বলবৎ হলে দিদির ভোটব্যাঙ্ক শেষ হয়ে যাবে। সেই ভয়েই এমন সব কথা বলছেন তিনি।’’ মমতাকে কয়েক দিন ধরেই খোঁচাচ্ছেন বিজেপি সাংসদ রামপ্রসাদ শর্মা। এর আগে ফেসবুকে মমতার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশে মদত দেওয়ার অভিযোগ আনার পর বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘এনআরসি-র বাইরে থাকা ব্যক্তিদের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আশ্রয় দেবেন।’’ শর্মার এই বক্তব্য অবশ্য অনুমোদন করেননি বিজেপি নেতৃত্ব। অসমের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের দেবব্রত
শইকিয়া বলেন, “মনে হয় মমতাদেবী এনআরসি প্রক্রিয়াটি ভাল করে জানেন না। তাঁকে সম্ভবত ভুল বোঝানো হচ্ছে। না হলে এক জন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নেতৃত্বে চলা এত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করা থেকে তিনি বিরত থাকতেন।”
যে সংগঠনের আন্দোলনের জেরে নাগরিক পঞ্জি তৈরি হচ্ছে, সেই ‘আসু’র সাধারণ সম্পাদক লুরিণজ্যোতি গগৈয়ের মন্তব্য, ‘‘একজন দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তির এমন হঠকারি মন্তব্য করা একেবারেই অনুচিত।’’