মায়াবতী। —ফাইল চিত্র।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা নিয়ে দেশে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। লোকসভা ভোটের আগেই এই আইন চালু করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে গোটা বিজেপি শিবির ঝাঁপিয়েছে। তার মধ্যেই গেরুয়া শিবিরকে স্বস্তি দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মায়াবতী জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমাদের দল অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিরোধী নয়।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু জোর করে এই আইন চাপিয়ে দেওয়ার বিধান আমাদের সংবিধানে নেই। এটি বাস্তবায়নের নামে সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে বিজেপি।’’
সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিল পেশ করতে সক্রিয় হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই আইনটি চালু করার সপক্ষে সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। তাঁর মন্ত্রিসভা এবং দলের অন্য সদস্যরাও এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। দলের আইটি সেলও এর সপক্ষে সামাজিক মাধ্যমে জনমত গড়ে তুলতে মরিয়া।
বিরোধীরা ইতিমধ্যেই তাড়াহুড়ো করে এই আইন চালুর বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় বিদ্বেষ, মণিপুর হিংসা, চিনের আগ্রাসনের মতো বিষয়গুলি থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতেই এই আইনটিকে প্রচারের আলোয় আনতে মরিয়া মোদী সরকার তথা বিজেপি। কগ্রেস ইতিমধ্যেই অবস্থান নিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বিজেপির ফাঁদে পা না দিয়ে তাদের ব্যর্থতা এবং জনগণের দুর্দশাকে প্রচারে তুলে আসরে নামবে। তা ছাড়া বিজেপি সরকার যে নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির আড়ালে মেরুকরণ করতে চাইছে, তাও প্রচারে তুলে ধরতে চায় বিরোধীরা।
এরই মধ্যে মায়াবতীও মোদী সরকারের এই আইনকে সমর্থন করায় বিজেপি নিশ্চিত ভাবেই কিছুটা স্বস্তিতে। শুধু মায়াবতী নন, উত্তরপ্রদেশের বিরোদী দল সমাজবাদী পার্টির সহযোগী ওমপ্রকাশ রাজভড়ের সুহেলদেব ভারতীয় সমাজও অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সমর্থন করেছে। রাজভর আগে অবশ্য বিজেপির সঙ্গেই ছিলেন। গত বছর উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগে মতবিরোধের জেরে জোটবদল করেন তিনি।
মায়াবতী এ দিন লখনউয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘বিএসপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিরোধিতা করছে না। কিন্তু আমাদের দেশের সংবিধানে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিধান নেই। এ জন্য সচেতনতা এবং ঐক্যমত্য গড়ে তোলাই সেরা পথ বলে আমরা মনে করি।’’ এর পরেই বিজেপিকে নিশানা করে মায়াবতী বলেন, ‘‘এই বিধি বাস্তবায়নের নামে সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করা হচ্ছে। দেশে বিজেপি সরকার যে ভাবে এই বিধি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে তাতে তাদের সংকীর্ণ ও স্বার্থপর রাজনীতিই সামনে উঠে আসছে। সংবিধানের ৪৪ নম্বর ধারায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার কথা বলা থাকলেও তা চাপিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়নি।”
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা সঙ্ঘ পরিবারের বহু বছরের কর্মসূচি। ২১তম আইন কমিশন এই বিধি প্রনয়ণের বিরোধিতা করলেও মোদী তা চালু করতে মরিয়া। বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার মনে করে, এর ফলে দেশের মুসলিম সমাজকে চাপে ফেলা যাবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই উত্তর-পূর্বের তিনটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাজ্য-সহ অনেক রাজ্যেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা এই বিধির বিরোধিতা করেছে। মায়াবতীও এ দিন সেই সুর টেনে বলেন, ‘‘এই বিধি প্রনয়ণ করতে গিয়ে কোনও ধর্মীয় পক্ষপাত থাকা উচিত নয়। বিজেপি সরকার যদি সংবিধান মেনে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বাস্তবায়ন করে, তবে আমাদের দল ইতিবাচক অবস্থান নেবে। তা না হলে আমরা এর বিরোধিতা করব।’’