ফলের রাজা আম আর আমের রাজা কে জানেন? তবে 'রাজা' না বলে একে 'রানি' বলাই শ্রেয়।
'নুরজাহান'। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের পত্নীর সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। যদিও ‘ওজনে’ এই নুরজাহান কিন্তু রানি নুরজাহানকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ভারতের একমাত্র একটি রাজ্যেই এই আমের চাষ হয়। এর চাহিদা এতটাই যে, এক একটি আম বিক্রি হয় ৫০০ থেকে হাজার টাকায়!
গুজরাত সীমান্তের কাছে ইনদওর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলা। এই জেলার কাট্ঠিওয়ারাতেই একমাত্র এই আমের চাষ হয়। কয়েকটিই মাত্র এই আমের গাছ রয়েছে সেখানে।
জানা যায়, এর উৎপত্তি আফগানিস্তানে। তবে কী ভাবে আফগানিস্তান থেকে এ দেশে এসে পৌঁছল এই গাছের প্রজাতি, তা পরিষ্কার নয়। তার এ রকম অদ্ভুত নামকরণের সঙ্গে সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, সেটিও স্পষ্ট নয়।
কাট্ঠিওয়ারার এক নুরজাহান আমচাষি শিবরাজ সিংহ জানিয়েছেন, ১৯৬৮ সালে এই আমের চারা গুজরাতে আনা হয়েছিল। তাঁর বাবা ঠাকুর পি সিংহ গুজরাত থেকে ওই বছর চারাগাছ কিনে মধ্যপ্রদেশে আনেন।
মধ্যপ্রদেশের কাট্ঠিওয়ারায় তাঁদের বাগানে ওই চারাগাছগুলি পুঁতেছিলেন তিনি। সেগুলি আজও ফল দিয়ে চলেছে।
তাঁর বাগানে সাকুল্যে ৬টি নুরজাহান আম গাছ অবশিষ্ট রয়েছে। প্রতি বছরই তাতে ফল ধরে। তবে গত বছর আবহাওয়ার জন্য ফলন ভাল হয়নি বলে জানান তিনি।
চলতি বছর এক একটি আম কত টাকায় বিক্রি হয়েছে জানেন? এক-একটি আম বি্ক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায়। আমের ওজন অনুযায়ী দাম নিয়েছেন তাঁরা।
শিবরাজের বাগানে চলতি বছর মোট ২৫০টি নুরজাহান আম ফলেছে। আম পাকার অনেক আগে সেগুলি গাছে থাকা অবস্থাতেই কিনে ফেলেছেন আম ভক্তেরা। এই আমের চাহিদা এমনই।
হবে নাই বা কেন? এক একটা আমের ওজনই সদ্যোজাত মানবশিশুর সমান। শিবরাজের বাগানে যে আমগুলি ফলেছে, তাদের প্রত্যেকের ওজন ন্যূনতম ২ কিলোগ্রাম! এমনকি সাড়ে ৩ কিলো ওজনের আমও ফলেছে!
এতেই অবাক হবেন না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগে একটি নুরজাহান আমের ওজন নাকি হত অন্তত ৫ কিলোগ্রাম। যা লম্বায় হত ১ ফুট পর্যন্ত!
জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে নুরজাহানের চেহারায় অনেক বদল এসেছে। দৈর্ঘ্যও কমেছে, ওজনও কমেছে। কিন্তু আম ভক্তদের কাছে কদর এতটুকু কমেনি তার।
মধ্যপ্রদেশ সরকার এই বিরল প্রজাতির আম গাছ সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এই বিরল প্রজাতির আমের জন্য পেটেন্ট-এর আবেদনও করেছে।