সান্তিয়াগো মার্টিন (বাঁ দিকে) এবং এমকে স্ট্যালিন। —ফাইল ছবি।
নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান নিলেও বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী সান্তিয়াগো মার্টিনকে বিশেষ কোনও সুবিধা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করল তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকে। বন্ড থেকে কোন রাজনৈতিক দল কতটা লাভবান হয়েছে, সেই নিয়ে জল্পনার মধ্যেই রবিবার নির্বাচন কমিশন নতুন তথ্য প্রকাশ্যে আনে। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বন্ড কেনা এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়ায় শীর্ষস্থানে থাকা সান্তিয়াগোর থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে তামিলনাড়ুর ডিএমকে। তার পরই এই নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন এমকে স্ট্যালিন এবং তাঁর দল ডিএমকে।
ডিএমকে-র চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল এডিএমকে প্রশ্ন তোলে যে, অনুদানের বিনিময়ে সান্তিয়াগোর লটারি সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’-কে তামিলনাড়ু সরকার বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অধুনা বিরোধী দলনেতা ই পলানিস্বামীর অভিযোগ, তামিলনাড়ু সরকার অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে দুর্বল আইন এনেছে এবং জুয়া সংস্থার কাছ থেকে নগদ অর্থ নিয়েছে।
সোমবার এডিএমকে-সহ অন্য দলগুলির সমালোচনার জবাব দিতে আসরে নামে ডিএমকে। দলের সাংসদ টিআর বালু জানান, অনেক লড়াইয়ের পর অনলাইনে জুয়া খেলা বন্ধের জন্য আইন এনেছে ডিএমকে সরকার। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, কোনও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি অনুদানদাতা সংস্থাকে।
রাজনৈতিক দলগুলি বন্ড সংক্রান্ত যে তথ্য মুখবন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছিল, রবিবার তা-ই প্রকাশ্যে আনে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দেওয়া তথ্যে দেখা যায় মাত্র চারটি দল অনুদানদাতাদের নাম প্রকাশ্যে এনেছে। এই দলগুলি হল ডিএমকে, এডিএমকে, জেডি(এস) এবং কাশ্মীরের জেকেএনসি। ডিএমকে-র দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ড মারফত মোট ৬৫৬.৫ কোটি টাকা পেয়েছে তারা। তার মধ্যে ৫০৯ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে সান্তিয়াগোর লটারি সংস্থা। বন্ড কেনায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেগা ইনফ্রাস্ট্রাকচার স্ট্যালিনের দলকে দিয়েছে ১০৫ কোটি টাকা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) গত মঙ্গলবার নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দিয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সেই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে নির্বাচন সদন। সেই বন্ডের ক্রেতা এবং প্রাপক দলের লম্বা তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশও করে দেওয়া হয়েছে। তালিকা খতিয়ে দেখা যায়, বন্ড কেনায় শীর্ষে রয়েছে বিতর্কিত লটারি ব্যবসায়ী মার্টিন সান্তিয়াগোর সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস’। তারা কিনেছে মোট ১,৩৬৮ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড।
বন্ড কেনা এবং অর্থ দেওয়ায় শীর্ষস্থান দখল করা লটারি ব্যবসায়ী সান্তিয়াগো নানা কারণে বার বার সংবাদ শিরোনামে থেকেছেন। ব্যবসায়ী মহলে তিনি ‘লটারি কিং’ নামে সমধিক পরিচিত। ব্যবসায় তাঁর উত্থানের কাহিনিও চমকপ্রদ। মায়নমারের ইয়াঙ্গনে শ্রমিক দিনমজুর হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ভারতে ফিরে এসে তামিলনাড়ুতে শুরু করেন লটারি ব্যবসা। পরে তাঁর এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে কেরল এবং কর্নাটকে। আরও পরে উত্তর-পূর্ব ভারত, এমনকি নেপাল এবং ভুটানে লটারি ব্যবসা শুরু করেন তিনি। বর্তমানে সান্তিয়াগোর সংস্থা আবাসন, বস্ত্র শিল্পেও অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ২০১৯ সাল থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি অর্থ তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ) আইন ভাঙার অভিযোগে সান্তিয়াগোর সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। সংস্থাটির কোয়েম্বাত্তূর এবং চেন্নাই দফতরে তল্লাশিও চালানো হয়।