দু’মাস আগে সনিয়া গাঁধীকে ফোন করে বিরোধীদের একজোট হয়ে রাষ্ট্রপতির প্রার্থী দেওয়ার প্রথম প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। আর আজ সেই নীতীশই সনিয়াকে ফোন করে জানালেন, রাষ্ট্রপতি ভোটে বিরোধীদের সঙ্গে নেই তিনি। তাঁর দলের ভোট যাবে নরেন্দ্র মোদীর মনোনীত
প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দের দিকেই।
যার ফলে ছত্রভঙ্গ বিরোধীদের এখন ঠিক করতে হবে বাকি ১৬ টি দলের ঐক্য ধরে রেখে কাকে প্রার্থী করা হবে। আগামিকাল সনিয়ার উদ্যোগে বিরোধীদের বৈঠকের আগে আজ কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার। যা দেখে আপাতত তাঁকেই বিরোধীদের প্রার্থীর দৌড়ে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। যদিও বিরোধী শিবিরের মতে, মীরা ছাড়াও ভালচন্দ্র মুঙ্গেকর, প্রকাশ অম্বেডকর, সুশীল কুমার শিণ্ডের মতো দলিত নেতারাও সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন। মূলত রামনাথের থেকেও ‘জনপ্রিয়’ দলিতের ব্যাপারে মায়াবতীর শর্ত মাথায় রেখে।
আরও পড়ুন: স্বামী যে প্রার্থী, জানতেনই না কোবিন্দ-পত্নী
বিজেপির দলিত প্রার্থীর বিরোধিতায় আপত্তি রয়েছে ডিএমকের। এমনকী অখিলেশ শিবিরের একাংশও লড়ার পক্ষপাতী নয়। এই ভাবনা রয়েছে কংগ্রেসের একাংশের মধ্যেও। কিন্তু বিদেশ সফররত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী দেবে। লড়াই হবে।’’ রাষ্ট্রপতির ভোটে গোড়া থেকেই লড়ার পক্ষে বামেরা। লালুপ্রসাদ ও অখিলেশ যাদবও আজ বলেন, আগামিকালের বৈঠকে বিরোধীদের প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হবে। নীতীশ সরে গেলেও বাকি দলের মনোভাব দেখে কংগ্রেসও লড়তে আগ্রহী। এমনকী কংগ্রেসের বাইরে কিংবা অরাজনৈতিক প্রার্থীতেও আপত্তি নেই সনিয়া গাঁধীর দলের।
কংগ্রেস সূত্রের মতে, নীতীশ ফোন করে জানিয়েছেন যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে বিহারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। নীতীশ শিবিরের যুক্তি, জেডি(ইউ) রামনাথ কোবিন্দের বিপক্ষে ভোট দিলেও তিনি জিতবেন। ফলে এখন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি ও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চাননা। তবে এখন এমন পদক্ষেপ করলেও ভবিষ্যতে বিরোধী জোট থেকে তিনি সরে আসছেন না বলে বিরোধী নেতাদের বোঝাতে চেয়েছেন নীতীশ। তাঁর মতে, মোদীর প্রার্থীকে তিনি সমর্থন করলেও বিহারের শাসক জোটে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। লালুকেও একই কথা
জানিয়েছেন নীতীশ।
আজ দলের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর কে সি ত্যাগীদের দিয়ে এই ঘোষণাই করান নীতীশ। এমনকী এ-ও জানিয়ে দেন, আগামিকাল বিরোধীদের বৈঠকেও জেডি(ইউ) থাকছে না। দলের যে নেতা শরদ যাদব সনিয়ার বৈঠকে যেতে আগ্রহী ছিলেন, তাঁকে দিয়েও সাংবাদিক সম্মেলন করিয়ে বলানো হয় রামনাথকে সমর্থনের কথা। যদিও জেডি(ইউ)-এর কেরলের সাংসদ বীরেন্দ্র কুমার নীতীশের অনুমতি নিয়ে জানিয়েছেন, তিনি সমর্থন
করবেন না রামনাথকে।
শিবসেনা-সহ এনডিএর সব শরিক তো বটেই, এমনকী বিজেডি, টিআরএস, এডিএমকে, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো এনডিএর বাইরের দলগুলিকেও সঙ্গে পেয়ে রামনাথের জয় এখন একপ্রকার পাকাই। আজ সকালে দিল্লিতে যোগাসন করে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীদের সঙ্গে দেখা করেন রামনাথ। বিরোধী শিবিরে চিড় ধরিয়ে বেজায় খুশি বিজেপি। নীতীশের সমর্থনের পর বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেন, ‘‘এনডিএর বাইরেও রামনাথের এক বিস্তৃত গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। এখন অন্য দলগুলিরও উচিত তাঁকে সমর্থন করা।’’