তখন সুদিন। বাহুবলী বিধায়কের সঙ্গে নীতীশ কুমার।— নিজস্ব চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। তার আগে সরকারের ভাবমূর্তি ফেরাতে তত্পর হয়ে উঠেছেন নীতীশ কুমার। গত কাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মোকামার জেডিইউ বিধায়ক তথা বাহুবলী অনন্ত সিংহের নানা ঠিকানায় অভিযান এবং ঘনিষ্ঠদের গ্রেফতার করে রাজ্যবাসীকে সেই বার্তাই দিতে চাইছে সরকার। পাশাপাশি, আমনোরের জেডিইউ বিধায়ক কৃষ্ণকুমার সিংহ ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধেও আজ জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শীঘ্রই তাঁকেও গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
গত মাস খানেক ধরেই বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী অভিযোগ করছিলেন, লালু-নীতীশের রাজত্বকালে অপরাধ বেড়েই চলেছে বিহারে। শাসক দলের বাহুবলীদের আতঙ্কে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হচ্ছেন। সুমো-র কথাটা মিথ্যেও নয়। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দরবারে সাধারণের অভিযোগের অনেকটা জুড়েই রয়েছে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা। গত সপ্তাহে রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ পদস্থ কর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন নীতীশ। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানেই তিনি দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানান, ‘‘রাজনৈতিক রঙ না দেখে বাহুবলীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। অপরাধীরা যেন ছাড়া না পায়।’’ এর পরেই সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ। পটনার এসএসপি জিতেন্দ্র রানাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয় সদ্য এনআইএ-ফেরত বিকাশ বৈভবকে। পটনা রেঞ্জের ডিআইজি পদে আনা হয় মগধ রেঞ্জের ডিআইজি শালীনকে। সৎ এবং দক্ষ অফিসার হিসেবে পুলিশ মহলে এই দুই অফিসারই পরিচিত। এরপরেই শুরু হয় বাহুবলী বিধায়ক অনন্ত সিংহকে গ্রেফতার করার রণনীতি।
কে এই অনন্ত সিংহ? বিহারের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা জানিয়েছেন, লালুপ্রসাদের ১৫ বছরের রাজত্ব এবং নীতীশ কুমারের ১০ বছরের রাজত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে অনন্ত সিংহের পরিবারের। লালুপ্রসাদের সরকারে মন্ত্রী ছিলেন অনন্তর দাদা দিলীপ সিংহ। নীতীশ কুমার ক্ষমতায় আসায় অনন্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়ে যান। অভিযোগ, দলীয় সভায় লোক জোটানো থেকে প্রচারের কাজে অর্থের জোগান, সব ক্ষেত্রেই প্রথম সারিতে ছিলেন অনন্ত। মুখ্যমন্ত্রী-নিবাস, ১ অ্যানে মার্গের দরজা তাঁর কাছে ছিল অবারিত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝিকে খুনের হুমকি দেওয়া থেকে নিজের বাড়িতে সাংবাদিক পেটানো, সব কিছুতেই সিদ্ধহস্ত এই ‘ছোটে সরকার’। বালি মাফিয়া, কয়লা মাফিয়া, মদ মাফিয়াদের কাছ থেকে দু’হাতে টাকা তুলতেন তিনি। পটনা শহরের প্রায় সব বড় শপিংমলে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে। বড় আবাসন প্রকল্পগুলিও ছোটে সরকারের ‘আর্শীবাদ’ নিয়েই তৈরি হচ্ছে। এমন ক্ষমতাবান অনন্ত সিংহ রাতারাতি যে গ্রেফতার হতে পারেন, তা ভাবতে পারছেন না শাসক শিবিরের তাবড় নেতারাও। তাঁরা বলছেন, ‘‘অনন্ত সিংহের এই পরিণতি বিহার রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে বাধ্য।’’
পুলিশ কর্তারা বলছেন, ‘‘প্রভাব যাই হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কোনও ভাবেই ‘আইনের শাসন’ নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না।’’ এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অনন্ত সিংহের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী মামলা শুরু করতে চলেছে। প্রাথমিক খোঁজ খবর নেওয়াও হয়েছে। দিল্লি থেকে সংস্থার স্পেশ্যাল ডিরেক্টর কার্নাল সিংহ নিজে গোটা বিষয়টি তদারক করছেন। ছোটে সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, গ্রেফতারের পরে নীতীশ কুমার-লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন অনন্ত। তাঁর অনুগামীরা দুই নেতার বিরুদ্ধে স্লোগানও দিয়েছেন। সেই কারণেই এ বার সেই অনন্তকেই নীতীশের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। তাঁকে দিয়েই নীতীশের বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ানোর কৌশল নেওয়া হচ্ছে।
মাঠে নেমেছেন আরজেডি-ছুট পাপ্পু যাদবও। আজ তাঁকে বিমান বন্দরে আটকায় পটনা পুলিশ। বাঢ়ে না যাওয়ার আশ্বাস দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বিকেলে কয়েক হাজার সমর্থক নিয়ে রাজভবন অভিযান করেন তিনি। পবন যাদব ওরফে পুটুস হত্যাকাণ্ডে নাম জড়িয়েছে অনন্ত সিংহের। সেই ঘটনার সিবিআই তদন্ত ও দোষীর শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন তিনি। ভূমিহারের হাতে নিহত পবন যাদবকে সামনে রেখে লালুপ্রসাদের তথাকথিত যাদব ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতেই এই আন্দোলন পাপ্পুর।