রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ প্রার্থীকে নীতীশ কুমার এবং তাঁর দল সমর্থন করায় বিজেপি-বিরোধী নেতারা হতাশ, কিন্তু আদৌ বিস্মিত নন। কারণ দীর্ঘ দিন ধরে নীতীশকে দেখে তাঁরা জানেন, স্রোতের বিপরীতে হাঁটার এই অভ্যাস নীতীশের নতুন নয়। তাঁর যে কোনও সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে নিজস্ব সমীকরণ। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর ফলে নীতীশ নিজের বৃহত্তর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করলেও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমশই হারাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী জোটের প্রার্থী দাঁড় করানোর বিষয়ে প্রথম উদ্যোগী হন নীতীশই। সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে জোট-প্রার্থীর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেন। আবার সেই নীতীশই বিরোধী নেতাদের বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে তার ২৪ ঘন্টার মধ্যে দিল্লিতে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যাহ্নভোজে। গত কাল পটনায় জেডিইউ কোর কমিটির বৈঠকে প্রাক্তন দল-সভাপতি শরদ যাদব কোবিন্দকে সমর্থনের বিষয়টির তীব্র বিরোধিতা করেন। জেডিইউ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর ফলে বিরোধী জোটে জেডিইউয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা যে তলানিতে এসে ঠেকবে, সে বিষয়েও নীতীশকে সতর্ক করেন তিনি। তবে লোকসভা ভোটে পরাজিত শরদ যাদব নীতীশের ‘দয়ায়’ বিহার থেকে রাজ্যসভায় গিয়েছেন। তাঁর টিকি নীতীশের কাছেই বাঁধা। ফলে শরদ যাদবকে নিজের সিদ্ধান্ত মানাতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি নীতীশকে।
বিহারের রাজনৈতিক মহলের মতে, অযোধ্যা-পরবর্তী সময়ে বিজেপি ছিল অচ্ছুত। সে সময়ে নীতীশ কুমারই জর্জ ফার্নান্ডেজকে নিয়ে এসেছিলেন বিজেপি শিবিরে। পাশাপাশি, লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিহার থেকে নিজের উত্থানকে সুনিশ্চিত করেছেন। আবার ২০১২ সালে এনডিএতে থাকার সময়ে রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন করেছেন ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। পরে নরেন্দ্র মোদীকে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করায় এনডিএ ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। প্রতিদ্বন্দ্বী লালুপ্রসাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব নীতীশই রাজ্যে মোদীর বিজেপিকে ঠেকাতে হাত ধরেন সেই লালুরই। আবার মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, প্রতি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ভাবে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছেন নীতীশ।
আরজেডি সহ-সভাপতি রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ সেই জয়প্রকাশ আন্দোলনের সময় থেকেই নীতীশকে দেখছেন। নীতীশের এই ‘দ্বিচারিতা’-র কট্টর সমালোচক রঘুবংশের মতে, ‘‘রাজনীতিতে সুবিধাবাদী মানসিকতা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া নীতীশের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। তাতে সাধারণের লাভ হয় না। কিন্তু ওঁর লাভ হয়।’’ নীতীশের একদা ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন সাংসদ শিবানন্দ তিওয়ারি অবশ্য মনে করেন, ‘‘মানুষের মনের ভাব বুঝে যাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নেন, নীতীশ সেই দলের। আবেগে কোনও সিদ্ধান্ত নীতীশ নেন না।’’ বিজেপি নেতা সুশীল মোদীও নীতীশের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী। তাঁর কাছে নীতীশের সব সিদ্ধান্তই ‘রাজনৈতিক’ বলে মনে হয়। আর তাঁর দলের প্রবীণ নেতা, জেডিইউ রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ মনে করেন, ‘‘রাজনীতিতে মানুষের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব জরুরি। নীতীশের সেই পারদর্শিতা ও দূরদর্শিতা আছে বলেই তিনি টিকে আছেন।’’