কফিনবন্দি স্বামীর জন্য হৃদয় ভেঙে শত টুকরো হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু চোখে-মুখে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা ধরে রেখেছিলেন তিনি।
কফিনের ঢাকনার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারা স্বামীর মুখের দিকে ঠায় চেয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ফৌজি স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধায় কখনও উচ্চস্বরে বেরিয়ে আসছিল ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান।
কখনও আবার স্বামীর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে উঠছিলেন, ‘‘আমি তোমাকে ভালবাসি বিভু।’’ তার পর আবার স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে থাকা। স্বামীর পথ অনুসরণের কথা সে দিনই বোধ হয় স্থির করে ফেলেছিলেন ২৮ বছরের ওই তরুণী।
নিজেকে কথা দিয়েছিলেন স্বামীর পথে চলার। স্বামীর মৃত্যুর ২ বছর পর তিনি ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হলেন।
তিনি নীতিকা কউল ঢৌনডিয়াল। জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত মেজর বিভূতি শঙ্করের স্ত্রী।
নীতিকার সঙ্গে বিভূতির পরিচয় এমবিএ করার সময় থেকে। বন্ধুত্ব, প্রেম এবং তার পর বিয়ে। কিন্তু বেশি দিন তাঁরা একসঙ্গে বিবাহিত জীবন কাটাতে পারেননি।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলায় মৃত্যু হয় নীতিকার স্বামী বিভূতির। জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর।
এই ঘটনার মাত্র ৯ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল দু’জনের। নীতিকা তখন দিল্লির একটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতেন।
বিভূতির কফিন স্পর্শ করে এবং স্বামীর বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে সে দিনই মনস্থির করে ফেলেছিলেন সেনার উর্দি গায়ে চাপাবেন। এ ভাবেই স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখবেন নিজের মধ্যে।
মৃত্যুশোক চেপে কাজ থেকে ইস্তফা দিয়ে এক মাসের মধ্যেই শুরু করে দেন পরীক্ষার প্রস্তুতি। ২০২০ সালে শর্ট সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) এবং তার পর সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড ইন্টারভিউ-এ উত্তীর্ণ হন তিনি।
চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণও নেন নীতিকা। শনিবার লেফটেন্যান্ট হয়ে ভারতীয় সেনায় যোগ দিলেন তিনি। গায়ে চাপিয়ে নিলেন সেনার উর্দি।
ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, “কত দিনের বিবাহিত জীবন তাঁর?” নীতিকার উত্তর ছিল, “২ বছর।” তাঁর কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন সকলে। নীতিকার উত্তর ছিল, “বিভূ শারীরিক ভাবে নেই ঠিকই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের বিয়ে আর নেই। বিভূ সব সময়ই আমার সঙ্গে রয়েছে।”