পরিকাঠামোয় ভরসা যৌথ উদ্যোগ মডেল

গত দু’দশক ধরে জনমোহিনী পথে চলা রেল বাজেটে ঘোষিত প্রকল্পগুলি শেষ করাই এখন কেন্দ্রের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০২:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

পরিকাঠামো খাতে পাঁচ বছরে লগ্নি প্রয়োজন ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। তার মধ্যে শুধু রেল প্রকল্প শেষ করতেই ৫০ লক্ষ কোটি। অথচ, রাজকোষে টাকা বাড়ন্ত। তাই দীর্ঘ সময় ধরে চলা রেলের চালু প্রকল্পগুলি শেষ করতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগেই (পিপিপি) ভরসা রাখলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। অতীতে যে ভরসা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সুরেশ প্রভুর মতো রেলমন্ত্রীরা। কিন্তু আশাপূরণ হয়নি। বাস্তবের জমিতে বিনিয়োগ আসেনি নামমাত্র। একই সঙ্গে সড়ক, জল, বিমানপথেও দেশকে জোড়ার কথা বলা হল। তবে তার জন্যও শাণ দেওয়া হল পিপিপি মডেল এবং ঋণপত্রের মতো বিভিন্ন অস্ত্রে।

Advertisement

গত দু’দশক ধরে জনমোহিনী পথে চলা রেল বাজেটে ঘোষিত প্রকল্পগুলি শেষ করাই এখন কেন্দ্রের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ঋণের ফাঁদে আটকে পড়া রেলকে অতীতের মন্ত্রীদের মতোই আজ কোনও নতুন দিশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নির্মলাও। নির্মলার স্বীকারোক্তি, ‘‘চালু রেল প্রকল্পগুলি আগামী ১২ বছরের মধ্যে শেষ করতে দরকার ৫০ লক্ষ কোটি। কিন্তু প্রতি বছর রেলের মূলধনী খাতে বিনিয়োগ মাত্র ১.৫-১.৬ লক্ষ কোটি টাকা।’’ সে কারণে কোচ নির্মাণ কারখানা গড়তে, লাভজনক রেললাইন বসাতে, পণ্য পরিবহণ করিডর নির্মাণের মতো ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। রেল যাত্রাকে মসৃণ ও আরামদায়ক বানাতে স্টেশন আধুনিকীকরণের প্রশ্নে ঘরের টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।

ফি বছরের মতো এ বারও যাত্রিভাড়ায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি ভর্তুকি দিয়েছে রেল। লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া সম্ভব হয়নি অর্থ উপার্জনের অন্যান্য খাতেও। অপারেটিং রেশিও আকাশ ছুঁইছুই। গত অর্থবর্ষেও একশো টাকা আয় করতে গিয়ে রেলের খরচ হয়েছে প্রায় ৯৫ টাকারও বেশি।

Advertisement

এই অবস্থায় আজ রেলের পরিকাঠামো খাতে ব্যয় ১,৬০,১৭৫.৬৪ কোটি টাকার লগ্নি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অর্থমন্ত্রক রেলকে ৬৫,৮৭৩ কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে।

রেলমন্ত্রক জানিয়েছে, জোর দেওয়া হয়েছে পুরনো লাইন বদলে নতুন লাইন বসানোয়। বরাদ্দ হয়েছে ১০,১২০ কোটি। নতুন লাইন পাততে ৭,২৫৫ কোটি, গেজ পরিবর্তনে ২২০০ কোটি, ডাবলিং ৭০০ কোটি ও যাত্রী পরিষেবা উন্নতিতে ৩৪২২.৫৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।

রেলের পাশাপাশি সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে জল-স্থল-আকাশ পথের উপরেও। উড়ান প্রকল্পের মাধ্যমে ছোট শহরকে আকাশ পথে জোড়ার কথা বলা হয়েছে। একই ভাবে সারা দেশে সড়কের জাল ছড়াতে গতি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে ভারতমালা প্রকল্পে। জলপথে সাগরমালা প্রকল্পের উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন বন্দরের আধুনিকীকরণ ছাড়াও বন্দর কেন্দ্রিক শিল্প গড়ে তোলা হবে। কেন্দ্রের দাবি, দেশের মধ্যে জলপথে পণ্য পরিবহণ বাড়লে কমবে খরচও। শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে রেলের পণ্য পরিবাহী করিডর নির্মাণের। আগামী এক বছরের মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম পণ্য করিডর খুলে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে। নির্মলার কথায়, পণ্যবাহী করিডর চালু হলেই মালগাড়ি মূল লাইন থেকে সরে যাবে। এর ফলে রেলজট কমবে যাত্রিবাহী লাইনে। গতি বাড়বে যাত্রী ট্রেনের। বাজেটে এসেছে পানীয় জল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার কথাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement